ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

চলচ্চিত্রে ঠান্ডা মাথার লড়াই

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ১১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চলচ্চিত্রে ঠান্ডা মাথার লড়াই

চলচ্চিত্র শিল্পের বেহাল দশা। সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে আগেই। এই শিল্পের বিকাশে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ডিজিটাল চলচ্চিত্রের আবির্ভাবে সরকারীভাবেও কেনা হয়েছে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি। ধীরে হলেও উন্নতির দিকে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমা- একথা স্পষ্ট। চলচ্চিত্র শিল্পের এই সম্ভাবনাকে পায়ে ঠেলে ‘উত্তপ্ত’ পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছেন এই শিল্পের মানুষেরাই। গত কয়েক বছর ধরেই বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

চলচ্চিত্র পাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায়, একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। প্রকাশ্যে না হলেও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এগুলো বেশি চর্চা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বনভোজন অনুষ্ঠিত হলো। এই আনন্দ আয়োজনে ওমর সানি, মৌসুমী, অমিত হাসান, শাকিব খানসহ অনেকেই অংশ নেননি। তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বনভোজনে দেখা যায়নি চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নেতাদেরও। এদিকে চলচ্চিত্র ফিল্ম ক্লাবের বনভোজনে অংশ নেননি মিশা সওদাগর, জায়েদ খান। বিরোধ যে দৃশ্যমান তা এই চিত্র দেখেই অনুমান করা যায়।

সর্বশেষ নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মৌসুমীর প্যানেল। মৌসুমীর প্যানেলকে সর্মথন দেন শাকিব খান, রিয়াজ, ফেরদৌস, পপি। নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয়েছিল উত্তপ্ত পরিবেশ। চলচ্চিত্র ফিল্ম ক্লাবের নির্বাচনে অমিত-ওমর সানি প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন লিটন হাসমি-নজরুল রাজ। এই প্যানেলকে সর্মথন দিয়েছেন জায়েদ খান। এর আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৭-২০১৮ সালের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে ওমর সানি-অমিত হাসান ও মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচনের আগেই বেশ কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয় ওমর সানী-অমিত হাসান ও মিশা সওদাগর-জায়েদ খানদের মধ্যে। এদিকে শাকিব খান, ওমর সানী-অমিত হাসানদের পক্ষ নিয়ে মাঠে নামেন। তাদের স্নায়ু যুদ্ধ বেশ ভালোই চলছিল। পরবর্তীকালে এই যুদ্ধ প্রকাশ্যে ‍রূপ নেয়। শাকিব খানকে কটাক্ষ করে মিশা সওদাগর বিভিন্ন মন্তব্য করেন। শাকিব খানও উত্তর দেন। এভাবেই উত্তপ্ত হতে থাকে চলচ্চিত্রাঙ্গন। নির্বাচনের রাতে শিল্পী সমিতির কার্যালয় থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় কে বা কারা শাকিব খানের ওপর হামলা করে। এ নিয়ে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে মামলা করেন শাকিব খান।

এছাড়া শাকিব খান অভিনীত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নবাব’ ও জিৎ অভিনীত ‘বাদশা’ সিনেমার মুক্তি বন্ধের আন্দোলনে নামে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘চলচ্চিত্র পরিবার’। এ নিয়ে রাজপথে মিছিল, সেন্সর বোর্ডের সামনে অবস্থান ধর্মঘট, এমনকি সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও হল মালিক সমিতির সভাপতি নওশাদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। এরপর চলচ্চিত্রাঙ্গন দুইভাবে বিভক্ত হয়। চিত্রনায়ক শাকিব খানের অশোভন মন্তব্যে তাকে বয়কট করে চলচ্চিত্র পরিবার। এছাড়া জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজসহ কয়েকজনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলচ্চিত্র পরিবার। যদিও পরবর্তীকালে শাকিব খানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।

এদিকে নাসির উদ্দিন দিলু, কাজী হায়াৎ, আব্দুল আজিজ, ওমর সানি, মৌসুমী, শাকিব খানসহ প্রায় দুইশ সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় ‘চলচ্চিত্র ফোরাম’ নামে নতুন সংগঠন। এই দুই সংগঠনের শিল্পীদের একসঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। বলা চলে দুই পক্ষের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এখনও সে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযোজক সমিতি বনাম শিল্পী সমিতি। প্রযোজক সিমিতির পিকনিকে শিল্পী সমিতির নেতাদের দেখা গেলেও শিল্পী সমিতির পিকনিকে প্রযোজক সমিতির নেতাদের দেখা যায়নি। এছাড়া জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন নিয়ে বিভক্তির কথাও শোনা যাচ্ছে। শিল্পী সমিতিকে বাদ দিয়ে এ অনুষ্ঠান করা হবে বলে গুঞ্জন আছে। তবে উপরের নির্দেশ শিল্পী সিমিতিকে বাদ দিয়ে নয়, শিল্পী সমিতিকে সঙ্গে নিয়েই উদযাপন হবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ। এখন দেখার পালা শেষ পর্যন্ত কী হয়!  

চলচ্চিত্রের ‘মাদার সংগঠন’ নামেখ্যাত প্রযোজক সমিতির দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হওয়ায় আশায় বুক বাঁধেন অনেকেই। চলচ্চিত্রের স্বার্থে এই সংগঠনটি কাজ করবে। এরই মধ্যে ছয় মাস পার হলেও মিটিং ছাড়া দৃশ্যমান কিছু লক্ষ করা যাচ্ছে না। চলচ্চিত্রের শিল্পের এই পরন্ত বিকেলে এমন বিভাজন চলচ্চিত্র শিল্পকে আরো সংকটের মধ্যে ফেলবে। এই সংকট শুধু ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়েই তৈরি হচ্ছে। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা পরস্পরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছেন, কাজ কম করছেন। ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় অসহায় হয়ে পড়ছে চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ের মানুষগুলো। এই সংকটময় মুহূর্তে চলচ্চিত্রের মানুষদের ব্যক্তি-বিদ্বেষ ভুলে চলচ্চিত্রের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করলে এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়