ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

অনেক প্রশ্ন অনেক শঙ্কা

মিনার মনসুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৫ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনেক প্রশ্ন অনেক শঙ্কা

চট্টগ্রামের সন্তান হিসেবে জব্বারের বলী খেলাকে ঘিরে আমাদের আবেগ অন্যরকম। এ উপলক্ষে শহরের একাংশজুড়ে তিন দিনব্যাপী যে বিশাল ও বিচিত্র মেলা বসতো- বলতে গেলে আমাদের গোটা শৈশবটাই জমা হয়ে আছে তার ঝুড়িতে। তো শতবর্ষী সেই বলী খেলা, ১৯০৯ সালে শুরু হওয়ার পর, আমাদের আয়ুষ্কালে কখনো বন্ধ ছিল বলে শুনিনি। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম ১২ বৈশাখের জন্যে। চট্টগ্রাম বিভাগের লাখ লাখ মানুষ এখনো অপেক্ষা করে। কিন্তু ১২ বৈশাখ চলে গেছে নিভৃতে। দেশকাঁপানো বলীরা (কুস্তিগীর) আসেনি, বসেনি ‘টমটম’ আর ‘চনামনার ঠ্যাং’-এর মধুর সেই মেলা।

বাংলা নববর্ষকে ঘিরে রমনার বটমূল অভিমুখী যে জনস্রোত শুরু হয়েছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এবং ক্রমশ বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গে রূপ নেওয়া যে-জনস্রোতকে সামরিক স্বৈরশাসকরাও থামিয়ে রাখতে পারেনি, সেই বটতলা-চারুকলা চত্বরও ছিল জনশূন্য নীরব নিথর। করোনা, ক্ষুদ্র এক অদৃশ্য ভাইরাস, থামিয়ে দিয়েছে সব। এমন দৃশ্য কি কেউ কখনো কল্পনা করেছে যে সাড়ে সাতশ কোটি জনসংখ্যার পৃথিবী নামক বিশাল জটিল যন্ত্রটি আচমকা থেমে গেছে একযোগে? তারপর তার আর চলার নাম নেই। বিমান চলছে না, রেল চলছে না, মহাসড়কগুলোতে নেই লাখ লাখ রুদ্ধশ্বাস গাড়ির কাফেলা। সর্বোপরি, থেমে আছে অর্থনীতির দানবীয় চাকা? কল্পবিজ্ঞানের যাবতীয় জল্পনা-কল্পনাকে হার মানিয়ে ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবারের মতো গোটা পৃথিবী একযোগে স্তব্ধ হয়ে আছে একমাসেরও বেশি সময় ধরে। গৃহবন্দি হয়ে আছে পৃথিবীর তাবৎ মানুষ। তারপরও থামানো যাচ্ছে না অদৃশ্য সেই দানবকে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

কেন এমন হলো? কারা মানবসমগ্রকে এমন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে এনে দাঁড় করালো? এরকম অনেক প্রশ্ন অনেক শঙ্কা এখন আমজনতার মনে। না, কোনো উত্তর নেই। এমনকি ন্যূনতম সান্ত্বনাটুকুও নেই স্বজনহারানো, কাজহারানো, অন্নহীন আশ্রয়হীন কোটি কোটি ‘আম আদমি’র জন্যে। নেই মৃত্যুর আগে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তাও। আছে কেবল নিষ্ঠুর নির্মম একঘেয়ে এক রাজনীতির দাবা খেলা। ট্রাম্প সাহেবরা করোনাস্ত্র ব্যবহার করে তাদের আদি ব্যবসায়িক শত্রু চীনকে কুপোকাত করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, আসল-নকল মিলিয়ে করোনাবাণিজ্যেও ফুলে ফেঁপে উঠছে চীনা অর্থভাণ্ডার। দিনশেষে বিশ্বের  বিপন্ন মানুষের পাশে কেউ না থাকলেও দুর্ভিক্ষ কবলিত ইয়েমেনে ঠিকই বোমা পড়ছে। মজবুত হচ্ছে তাদেরই চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে বিধ্বস্ত বিপন্ন দেশগুলোর গলায় বলবানদের পরিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক অবরোধের ফাঁস। আবেগবশত আমরা যদিও বলি করোনা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান কিছুই মানে না। কিন্তু পরিসংখ্যান তো বলছে ভিন্ন কথা। মৃতদের তালিকায় ধনীর চেয়ে দরিদ্রের, সাদার চেয়ে কালোর, ইউরোপ-আমেরিকার মূল অধিবাসীর চেয়ে অভিবাসীর এবং কেন্দ্রের চেয়ে প্রান্তিকের সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর তালিকায় এই বৈষম্য আরও মর্মান্তিকভাবে প্রকট। অতএব, করোনারও যে কেবল শ্রেণিভেদ আছে তাই নয়, বরং করোনা সমাজদেহের বীভৎস এই ক্ষতকে আরও উৎকটভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

করোনার সর্বব্যাপী এই আক্রোশ থেকে আমরা কবে পরিত্রাণ পাবো, কীভাবে পাবো সে প্রশ্নের উত্তর এ মুহূর্তে কারো কাছে নেই। অতএব, আমাদের দাঁতে দাঁত চেপে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সময়ই কেবল জানে এর যথার্থ উত্তর। আপাতত মোটা দাগে আমরা সেই অপ্রিয় প্রশ্নটির মুখোমুখি হতে পারি, যে-প্রশ্নটি এখন থেকে নানা প্রসঙ্গে প্রায়শ প্রবলভাবে উত্থাপিত হতে থাকবে বলে আমার আশঙ্কা। প্রশ্নটি হলো, করোনা কি মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটাবে? নিশ্চিতভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো জ্ঞান এখনো মানুষের করায়ত্ত হয়নি। তবে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ও করোনার গত কয়েক মাসের গতিপ্রকৃতি থেকে এটুকু অনুমান করতে পারি যে, মানবজাতি বিলুপ্ত হবে না, বরং করোনাই পরাস্ত হবে। আজ কিংবা কাল। তবে করোনা নিশ্চিতভাবে অমোচনীয় কিছু ‘চিহ্ন’ রেখে যাবে, যেন তার অস্তিত্ব আমরা কখনো ভুলে না যাই।

আমরা চাইলেও কি ভুলতে পারবো তাকে? মনে হয় না। কারণ করোনা আমাদের চিরচেনা পৃথিবীতে অনতিক্রম্য এক বিভাজনরেখা টেনে দিয়েছে। আমরা এখন থেকে তাকে চিহ্নিত করবো করোনাপূর্ব ও করোনাউত্তর পৃথিবী নামে। যত প্রলেপই লাগানো হোক না কেন, দুই পৃথিবী আর কখনো এক হবে না। তার অর্থ কি এই যে করোনাউত্তর পৃথিবী আমূল বদলে যাবে? বন্ধ হবে নির্দয়ভাবে ধরিত্রীপীড়ন ও মানব নিধনের আগ্রাসী কর্মযজ্ঞ? তথাকথিত সামরিক প্রতিরক্ষা খাত নয়, জীবনরক্ষায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যখাতই বিবেচিত হবে ভবিষ্যতের প্রকৃত প্রতিরক্ষা খাত হিসেবে এবং পাবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও মনোযোগ? একইভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি? বন্ধ হবে পরিবেশবিধ্বংসী সব কার্যক্রম? লাগাম টেনে ধরা হবে মানুষে মানুষে পর্বত-প্রমাণ বৈষম্যের?

আমি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা নই, নই জ্যোতিষীও। তবে করোনাতাড়িত সামান্য এক আদার বেপারি হিসেবে মানবজাতির দীর্ঘ দুর্গম পথযাত্রার রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আপনাদের এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে ওপরে যে-ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে, ব্যাপক ও গভীরতর অর্থে তার কোনোটাই বদলাবে না। ট্রাম্পসাহেবরা থাকবেন। থাকবে তাদের কূট রাজনীতি ও আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি। হয়তো করোনাসৃষ্ট মহামন্দার ক্ষতি পোষাতে আরও জোরে ঘুরতে থাকবে ‘ওয়ার-ইন্ডাস্ট্রি’র চাকা। আর তার নিচে পিষ্ট হতে থাকবে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, ইরাক-ইরান-আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মতো দেশগুলো। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাকার নানা অজুহাতে এ তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হতে থাকবে। অন্যদিকে, প্রকাশ্য দিবালোকে নগ্নভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা খড়কুটোর মতোই ভাসতে থাকবে দেশকালের সীমানাবিহীন তীরহারা এক সমুদ্রের উদ্ধাররহিত ঘূর্ণাবর্তে।

প্রশ্ন উঠতে পারে যে, করোনাপূর্ব পৃথিবী যদি এতো খারাপই হবে তাহলে কেন কোটি কোটি প্রাণ দিবারাত্রি মাথা কুটে মরছে সেই পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার জন্যে? এ প্রশ্নের সহজ উত্তরটি হলো মানুষ মজ্জাগতভাবেই শৃঙ্খলবিমুখ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে যে, কখনো কোনো প্রকার বন্দিত্বকে সে মেনে নেয়নি, নিতে পারেনি। এমনকি অলৌকিক স্বর্গসুখ কিংবা লৌকিক সমাজতন্ত্রের সুনিশ্চিত নিরাপত্তার স্বর্ণ শৃঙ্খলও নয়। অতএব, করোনাসৃষ্ট এই অদৃষ্টপূর্ব অবরুদ্ধতা থেকে যেকোনো মূল্যে সে মুক্তি পেতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তার এই আকুলতার অর্থ কোনোভাবেই করোনাপূর্ব পৃথিবীর বিপুল বঞ্চনা, বৈষম্য, কদর্যতা এবং সর্বোপরি প্রকৃতি ও মানববিধ্বংসী ভোগবাদী উন্মাদনাকে পুনরালিঙ্গন করা বা ফিরে পেতে চাওয়া নয়। আর যদি সেটা সে করতে চায়ও করোনাসৃষ্ট লাশের মহাপ্রাচীর তাতে অলঙ্ঘ্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বাধা হয়ে দাঁড়াবে করোনা-দংশিত এবং করোনা-শকে ট্রমাগ্রস্ত আরও কোটি কোটি মানুষ। তারা মুখে বলুক বা না-বলুক, এ সত্য বাতাসে বাতাসে উচ্চারিত হতে থাকবে যে, বলবান কিছু মানুষের সীমাহীন লোভ আর অমানবিক উন্মাদনাই তাদের এ নজিরবিহীন বিপর্যয় ও বিপন্নতার জন্যে দায়ী করোনা পৃথিবীর জন্যে মহাবিপর্যয় বয়ে এনেছে একথা সত্য। তার চেয়েও বড় সত্য হলো, ক্ষুদ্র অদৃশ্য এই ভাইরাসটি গোটা মানবজাতিকে এমন এক ভীতিকর জীবনধারার চক্রাবর্তে ঠেলে দিয়েছে যা কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। কোনো মানবসন্তানের পক্ষে এ কি ভাবা সম্ভব যে, সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তখন তার কপালে মমতার পরশ বুলিয়ে দেওয়া দূরে থাক, বরং তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে পুরো পরিবার, প্রিয়জন ও চেনা পৃথিবী থেকে! প্রিয়জনের মুখদর্শন ছাড়াই নির্বান্ধব অবরুদ্ধতার মধ্যে করুণভাবে মানুষটি মরে যাবে, সেভাবেই চরম অনাত্মীয় পরিবেশে তাকে কবরস্থ করা হবে। মিলবে না শেষবার মুখ দর্শনের সুযোগটুকুও। তার অন্তিম যাত্রায়ও শরিক হতে পারবে না কোনো স্বজন। বুকভরা আর্তনাদ নিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না কারো। হাসপাতালের শয্যা কিংবা কবরও জুটবে না সবার ভাগ্যে। এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি কি আমরা দুঃস্বপ্নেও দেখেছি কখনো?

তারপরও মাত্র এক বা দেড়মাসের ব্যবধানে অচিন্তনীয় এ বাস্তবতাকে যেমন আমরা মেনে নিতে শিখেছি, তেমনি আমাদের অজান্তেই আরও অনেক কিছু হয় আমরা ইতোমধ্যে রপ্ত করে ফেলেছি, অথবা রপ্ত করে ফেলবো অচিরেই। প্রিয়জন হারানোর দুর্বহ শোকের মধ্যেও ক্ষুধার চাবুক যেমন আমাদের খেতে বাধ্য করে, এও অনেকটা তাই। জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে আমরা যে ইতোমধ্যেই নতুন এক জীবনধারা তথা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি তা সর্বজনবিদিত। ড্রাইভার নেই, কাজের বুয়া নেই, সভাসমাবেশ কিংবা জমকালো ইফতার পার্টি নেই, নেই নিত্যনতুন হোটেল-রেস্তোরাঁর চোখধাঁধানো খাদ্যের জোগান; তারপরও জীবন চলছে। এ অভ্যস্ততা ক্রমশ আরও গাঢ় হবে। বাড়বে সমাজবিচ্ছিন্ন ও আত্মনির্ভর হয়ে বেঁচে থাকার প্রবণতা। বিস্ময়করভাবে বেড়ে যেতে পারে প্রকৃতিলগ্নতাও। এটাকে কি আমরা বিচ্ছিন্নতার সংস্কৃতি বলবো? না, বরং শারীরিক বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থেকেও কীভাবে মানসিক বা আত্মিকভাবে অধিকতর কাছে থাকা যায়, সেই সংস্কৃতির সূচনাপর্ব বলাটাই বোধ করি অধিক যুক্তিযুক্ত হবে। আমরা তো জেনে গেছি যে, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে যত অহংকারই আমরা করি না কেন, ক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছেও আমরা অসহায়। আমার ধারণা, এই অসহায়ত্বকে মেনে নিয়েই সূচিত হবে করোনা-উত্তর পৃথিবীর যাত্রা।

সেটা ভালো কি মন্দ বিচার্য বিষয় কিন্তু তা নয়। বাস্তবতাই এখানে মূল নিয়ামক। লাগামও তার হাতেই। ফলে এটা সহজেই বোধগম্য যে বাস্তবতার চাপে ব্যক্তির জীবনধারা যখন বদলে যাবে, তখন তার অনিবার্য অভিঘাত থেকে সমাজ ও  রাষ্ট্র কেউই আত্মরক্ষা করতে পারবে না। তারাও বদলাবে বা বদলাতে বাধ্য হবে। মানুষের স্বাস্থ্যসচেতনতা ও পরিবেশপ্রীতি বাড়বে। বাড়বে মানসম্পন্ন, ব্যয়সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার চাহিদাও। ট্রাম্পসাহেবরা সেটা পছন্দ না করলেও পুঁজি ও গদি রক্ষার স্বার্থে তারাও নতুন এ বাস্তবতার সঙ্গে একধরনের সমঝোতা বা আপস করতে বাধ্য হবেন। একটা উদাহরণ দিই, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের পোশাকশিল্পের মালিকরা যে থোড়াই কেয়ার করেন তা সবাই জানে। কিন্তু এখন যেমন প্রতিষ্ঠান সচল রাখার স্বার্থে কর্মরত শ্রমিকদের হাত-পা সাবান-পানিতে ধুয়ে দিতে তারা বাধ্য হচ্ছেন, তেমনি ভবিষ্যতে এ বাধ্যবাধকতা আরও বাড়বে। একইভাবে বাড়বে প্রযুক্তিনির্ভরতাও। দাপ্তরিক মিটিং থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সভাসমাবেশ পর্যন্ত গড়াবে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব। ভোগসর্বস্বতা কি খানিকটা কমবে? আমি নিশ্চিত নই, তবে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবারও হয়ত ‘সিম্পল লিভিং হাই থিংকিং’-এর ধারণা গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে।

কিন্তু এও বাহ্য। আসল প্রশ্নটিই তো অমীমাংসিত রয়ে গেছে এখনো। অনিবার্যভাবে আমাদের যে-প্রশ্নটির কাছে বারবার ফিরে আসতে হবে সেটি হচ্ছে কেন এমন হলো? কারা মানবসমগ্রকে এমন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে এনে দাঁড় করালো? যদি বলি, করোনা নিজে আসেনি, আমরাই তাকে ডেকে এনেছি তাহলে কি খুব বাড়িয়ে বলা হবে? ট্রাম্পসাহেবদের তো আমরাই বানিয়েছি, তাই না? তারা আমাদের থেকে ভিন্ন হবে কেন? আমি তো মনে করি, আজকের এই মহাবিপর্যয়ের জন্যে দায়ী আমরাই, দায়ী আমাদের চরম ভোগবাদি মানসিকতা, সীমাহীন লোভ এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বেপরোয়া রকমের বাড়াবাড়ি। ধর্মশাস্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা আছে, স্রষ্টাও সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। প্রকৃতিই-বা কেন করবে? তারও তো সহ্যের একটা সীমা আছে। অতএব, আমরা যদি ভেতর থেকে না বদলাই, তাহলে করোনা ফিরে ফিরে আসবে, ২০১৫ সালে যেমনটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বিল গেটস।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক। পরিচালক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়