করোনায় দুই কৌশলে বিএনপি
মহামারি করোনায় দেশের আর্থ-সামাজিক খাত থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এসেছে পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। এরই ধারাবাকিতায় ‘রাজপথের প্রধান বিরোধী দল’ বিএনপি রাজনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। নতুন কৌশল অনুযায়ী এই মুহূর্তে দলটি রাজপথের কঠোর আন্দোলন-সংগ্রামে যেতে চায় না। এর পরিবর্তে দুই কৌশলের ওপর গুরুত্ব দিতে চায়। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধান লক্ষ্য, সদ্য কারামুক্ত খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা করানো। দ্বিতীয় লক্ষ্য, করোনা মোকাবিলায় জনগণের পাশে থাকা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, কিছুদিন আগেও দলের রাজনৈতিক কৌশল ভিন্ন ছিল। প্রথমত, তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলন। সে জন্য দলটি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-মানববন্ধনসহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে আসছিল।
দ্বিতীয়ত লক্ষ্য অনুযায়ী রাজপথের আন্দোলনে শক্তি জোগানোর কাজ করছিল দলটি। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও গতিশীল করতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনেরও কাজ শুরু করেছিল। আর এই কাজটি লন্ডন থেকে তদারকি করছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার তারেক রহমান।
তৃতীয়ত, পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করে আগামী দিনে আন্দোলনের রূপরেখা নির্ণয়ের দিকে যাচ্ছিল দলটি। এই কাজ মূলত স্থায়ী কমিটির নেতারা করছিলেন।
তবে, দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার কারণে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে দলটি। এরই আলোকে কমিটি গঠন ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে গত ২২ মার্চ দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘বিএনপির সব পর্যায়ের কমিটি গঠন ও পুণর্গঠন কার্যক্রম চলতি বছরের আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘পরামর্শ সেল’ গঠন করা হয়েছে জানিয়ে দলের চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মোবাইলে পরামর্শ দেওয়া হবে। ড্যাবের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত সব ধরনের পরামর্শ দেবেন। সীমাবদ্ধতা মধ্যে যতদূর সম্বব অনলাইনে সহযোগিতা করা হবে।’একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিষয়গুলো নিয়ে যেমন হাত ধোয়া, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে মানুষকে সবার আগে সচেতন করার জন্য কাজ শুরু করেছি। এই কর্মসূচি চলছে।এছাড়া প্রতিদিন মোবাইলফোনে মেসেজ দিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মোকাবেলা যার-যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেভাবে তারা যার-যার অবস্থান থেকে কাজও করছেন।’
এদিকে, খালেদা জিয়ার কারামুক্তির পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন। যেন কেউ আক্রান্ত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সারাদেশের মানুষের উদ্বিগ্ন ছিল।’ তার কারামুক্তিতে মানুষের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ ডেজ এম জাহিদ বলেন, ‘এখন রাজপথের আন্দোলন বা অন্য কিছু নয়। এখন করোনা নিয়ে ভাবার সময়। কীভাবে আমরা এই মহামারি থেকে রক্ষা পেতে পারি, দেশের মানুষ কীভাবে রক্ষা পেতে পারে, তা নিয়ে ভাবতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন মোকাবিলায় দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’
ডা. এ ডেজ এম জাহিদ বলেন, ‘এখন আমাদের সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। দুই দিন তো হয়ে গেলো। আরও অন্তত ১২ দিন থাকতে হবে। তাহলে যারা আক্রান্ত হবেন, তাদের আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। আর মারাত্মকভাবে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘গরিব ও দিনমজুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা বাইরে বেরিয়ে আসবেন।’ এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা/সাওন/এনই
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন