ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ধারাবাহিক: পর্ব-৩

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ১০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ধারাবাহিক: পর্ব-৩

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গ দেখা দেয়ার কত দিন পর্যন্ত সংক্রামক হিসাবে কাজ করে এবং কীভাবে?

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি কখনোই সরাসরি অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে পারে না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি, উপসর্গ দেখা দেয়া থেকে শুরু করে ৬ দিন পর্যন্ত মশার জন্য সংক্রামক হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ এই সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো স্বাভাবিক এডিস মশা কামড় দিলে সেই মশাটিও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহক হয়ে পড়বে। কিন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে তখন আর এটি হবে না।

এডিস মশা কেন কামড়ায়?

এডিস স্ত্রী মশা তার জীবদ্দশায় তিনবার ডিম পাড়ে। প্রতি কিস্তিতে ১০০টি পর্যন্ত ডিম পারতে পারে। ডিম পাড়ার আগে তার রক্তের দরকার পড়ে-  তখন সে কামড়ায়। একটি মশা কতবার কামড়াবে সেটা বড় বিষয় নয়। প্রয়োজনীয় পরিমান রক্তের জন্য যতবার দরকার ততবার কামড়াবে। সাধারণত দুইবার কামড়ালেই প্রয়োজনীয় পরিমান রক্ত সংগ্রহ করতে পারে এডিস, নিরবিচ্ছন্ন সুযোগে একবারের কামড়েই রক্ত সংগ্রহের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।

এডিস মশা কোথায় ডিম পাড়ে? কোথায় বেড়ে ওঠে ডিম থেকে লার্ভা এবং লার্ভা থেকে মশা?

স্ত্রী এডিস মশা স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা পরিবেশে ডিম পাড়ে। নোংরা, ময়লা পরিবেশে এই মশা একেবারেই ডিম পাড়বে না তা কিন্ত নয়। এডিস মশা বিভিন্ন পাত্রের ভেজা অংশের কিনারে এবং ভিতরের দিকে ডিম পেড়ে থাকে। কাদামাটির গর্তে জমে থাকা পানিতেও ডিম পাড়ে। অনেক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় এই মশার ডিম পাড়ার সবচেয়ে বেশি পছন্দের স্থান পরিত্যক্ত টায়ার, পাত্র; তারপরের পছন্দের স্থান টব এবং টবের নিচে রাখা পানির পাত্র। মোট কথা জমে থাকা পানির তীর ঘেঁষেই ডিম পাড়ে এডিস যাতে করে অচিরেই পানির নাগাল পেয়ে ডিমগুলো লার্ভায় পরিণত হয়ে নতুন প্রজন্মের মশার বিস্তার ঘটাতে পারে। এ কারণে বৃষ্টির পর কিংবা প্রতিদিন টবে পানি দেয়ার সময় ডিমগুলো যখন পানির সংস্পর্শ পায় তখনই তা থেকে লার্ভা হয়ে নতুন মশার জন্ম হয়। দুই-চারদিনের মধ্যেই ডিম থেকে লার্ভার উৎপত্তি হয়ে সব মিলিয়ে ৭-১০ দিনের মধ্যেই ডিম থেকে মশা জন্ম নিতে পারে। ডিম থেকে মশা জন্ম নেয়ার জন্য স্থির পানি হচ্ছে উপযুক্ত পরিবেশ। চলমান কিংবা স্রোতে ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নিতে পারে না।

এডিসের ডিম অনেক সময় সুপ্তাবস্থায় ১ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেক গবেষক। তাই কোথাও কোনভাবে এই ডিম রয়ে গেলে শীত, বর্ষা পেরিয়ে তা আবার ভবিষ্যতের কোনো গ্রীষ্মে স্থির পানিতে তা থেকে এডিস মশা জন্ম নিতে পারে।

ঘরে-বাইরে দুই জায়গাতেই এডিস মশা আছে

এডিস মশা ঘরে-বাইরে দুই জায়গাতেই থাকতে পারে। ঘরে পর্দার পেছনে, ক্লজেটে, অন্ধকার জায়গায় থাকতে পারে। অর্থাৎ অন্ধকার, আর্দ্র পরিবেশ তাদের পছন্দ। ঘরের বাইরে ছায়াযুক্ত আর্দ্রস্থানে বেশি থাকে এডিস মশা।

এবারের ডেঙ্গু কেন ভিন্ন?

এবারের ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গ  সাধরণভাবে যে ধরণের উপসর্গ দেখা যায় তার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।

সেই ভিন্নতাগুলো হচ্ছে-

জ্বর উচ্চমাত্রার হচ্ছে না

সাথে গায়ের ব্যথাও ততটা তীব্রভাবে দেখা যায় না

প্লেটিলেটের পরিমানও অনেক বেশি কমে যায় না

হেমোরেজিক ডেঙ্গুর মতো তেমন রক্তক্ষরণও হয় না। অনেক সময় সামান্য রক্তক্ষরণ কিংবা রক্তক্ষরণ ছাড়াই হঠাৎ রোগী শকে চলে যায়। এই অবস্থাটা খুবই মারাত্মক। কারণ নতুন উপসর্গ ছাড়াই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় বলে রোগী কিংবা চিকিৎসক কেউই ঠিক প্রস্তুত থাকেন না।

যে কারণে রোগী মারা যেতে পারে

জ্বর শুরু হওয়ার পর প্রথম তিনদিন পর্যন্ত মোটামুটি শকে যাবার ঝুঁকি নেই।

সাধারণত ডেঙ্গুজ্বরের চতুর্থ দিন থেকে সপ্তমদিন এই চারদিনের মধ্যে প্লাজমা লিকেজ বা রক্তরস রক্তনালীর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। এমনটি হলে তখন শরীরে রক্তের পরিমান কমে যাবে। ফলে রক্তচাপ কমে যাবে, যার প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা বিঘ্নিত হয়ে তা সহসাই শকে পর্যবসিত হতে পারে।

জ্বরের চতুর্থ দিন থেকে সপ্তমদিন এই চারদিন হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এই সময়ে জ্বর না থাকলেও শকের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

শকের শুরুতে রক্তচাপ কমে যাবে, প্রস্রাবের পরিমান কমে যাবে, পালস বা নাড়ির গতি বেড়ে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ১০০ এর উপরে থাকবে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি অবনতির আগেই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে পরিমিত মাত্রায় রোগীকে স্যালাইন দিতে হবে, দরকার হলে রক্ত দিতে হবে। তবে অকারণে আগাম ঝুঁকির কথা ভেবে রোগীকে বাড়তি স্যালাইন, বাড়তি রক্ত দিলে অন্যবিপদ হতে পারে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ আগস্ট ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়