ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভয়ানক উপসর্গ যখন দুশ্চিন্তার কারণ নয় (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভয়ানক উপসর্গ যখন দুশ্চিন্তার কারণ নয় (শেষ পর্ব)

প্রযুক্তি কিংবা গুগলের কল্যাণে এখন সচেতন মানুষ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সহজেই জানতে পারেন। যেমন মাথাব্যথা হলে গুগলে সার্চ দিয়ে মাথাব্যথার কারণ সহজেই জানা যায়। মাথাব্যথার ধরন নিজেই শনাক্ত করে ঘরোয়া চিকিৎসাও করা সম্ভব। অনেকে কোনো একটি রোগের উপসর্গ নিজের মধ্যে আছে মনে করে ঘাবড়ে যান। কিন্তু তিনি জানেন না, বুকে ব্যথা অনুভব করলেই হার্ট অ্যাটাক হবে এমন নয়। কিছু ভয়ানক উপসর্গ আছে যেগুলো সবসময় দুশ্চিন্তার কারণ নাও হতে পারে। দুই পর্বের প্রতিবেদনে আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব।

রক্তময় মল : মলে রক্তের উপস্থিতি কখনোই প্রত্যাশিত কিছু নয়, এ উপসর্গ দেখে যে কেউ আতঙ্কিত হতে পারে, কিন্তু তরুণ লোকদের রেক্টাল ব্লিডিং বা মলে রক্তের উপস্থিতি মারাত্মক কিছুর লক্ষণ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, বলেন এনওয়াইইউ ল্যানগোন হেলথের ইন্টারনাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ইন্সট্রাক্টর আলবার্ট আহন। তিনি আরো জানান, ‘অল্প বয়স্ক লোকদের মল রক্তময় হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে কম আঁশের ডায়েট ও অল্প কোষ্ঠকাঠিন্য।’ প্রচুর তরল পান ও বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরও মলে রক্ত দেখলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

চোখের পাতা কাঁপা : চোখের পাতার কম্পন অস্বস্তি বা ভোগান্তির কারণ হতে পারে, কিন্তু আপনি এর জন্য স্বাস্থ্য সমস্যার পরিবর্তে জীবনযাপনকে দোষারোপ করতে পারেন। ডা. আহন বলেন, ‘এ ডিজিটাল যুগে আমরা দীর্ঘসময় ফোন স্ক্রিন বা কম্পিউটার স্ক্রিন নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অনেক লোকের ক্ষেত্রে এ ব্যস্ততা চোখে চাপ ফেলতে পারে।’ আপনার চোখের কাঁপুনি থামাতে ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে বেশি সময় তাকাবেন না। সম্ভব হলে আপাতত সকল ধরনের ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি অথবা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন। এমন কাজে জড়িত হতে চেষ্টা করুন যা আপনাকে মানসিক প্রশান্তি ও চোখে আরাম দেয়। স্ক্রিন টাইম কমানোর পরও আপনার চোখের পাতা ঘনঘন কাঁপলে তা নিউরোলজিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, কিন্তু এর সম্ভাবনা খুব কম।

জয়েন্টে শব্দ হওয়া : জয়েন্টে শব্দ হলেই আর্থ্রাইটিস হবে মনে করে দুশ্চিন্তা করবেন না এবং এরকম শব্দ এ স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও নয়। ডা. আহন বলেন, ‘জয়েন্টের ভেতর বায়ু ডেভেলপ হয় ও তারপর ফেটে পড়ে- এর ফলে আপনি জয়েন্টে শব্দ শুনতে পান। রগের সঙ্গে শক্ত পেশির সংঘর্ষেও এ ধরনের শব্দের উৎপত্তি হতে পারে। গভীর স্ট্রেচ অথবা গরম সেঁকে এ শব্দের হার কমাতে পারেন।’

বসা থেকে ওঠার পর মাথাঘোরা : পৃথিবী ঘুরছে মনে হওয়া ভীতিকর, কিন্তু আপনার নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে বসা থেকে দাঁড়ানোর পর মাথাঘোরা অথবা মস্তিষ্কে হালকা অনুভব করা আনকমন কিছু নয়, বলেন ডা. আহন। তিনি আরো বলেন, ‘যখন শরীরের অবস্থান পরিবর্তিত হয়, তখন মস্তিষ্কে রক্ত ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু নিম্ন রক্তচাপে এ কাজটি কঠিন হয়ে পড়ে।’ এসময় আপনি চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন, কিন্তু স্থির দাঁড়িয়ে থাকলে এ উপসর্গ চলে যায়। কিন্তু নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা না থাকার সত্বেও হঠাৎ করে এরকম অভিজ্ঞতা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

পিঠ ব্যথা : পিঠে ব্যথা করলে অধিকাংশ লোকে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসেন যে হার্নিয়েটেড ডিস্ক অথবা টিউমারের কারণে সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আপনাকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, অর্ধেকেরও বেশি পিঠ ব্যথার কেস হচ্ছে নিরীহ প্রকৃতির, যেমন- দীর্ঘক্ষণ অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসলে পিঠে ব্যথা অনুভূত হয়। যারা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘসময় কাজ করেন, তাদের পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই একটানা কাজ না করে কিছুসময় পরপর ওঠে দাঁড়ান ও হাত-পা প্রসারিত করুন, সম্ভব হলে আশপাশে হেঁটে আসুন- এতে পিঠ ব্যথার জন্য দায়ী প্যাটার্ন ভেঙে যাবে ও ব্যথা হ্রাস পাবে, বলেন ডা. আহন। তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া পিঠের মেডিক্যাল পরীক্ষার ফলাফল দেখে ভেঙে পড়বেন না, কারণ বেশিরভাগ মানুষের মেরুদন্ডে কোনো না কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। তাই আপনার চিকিৎসক থেকে আগে এটা জানুন যে এ অস্বাভাবিকতা কতটা মারাত্মক।’

ক্লান্তি : ক্লান্তি এত বেশি রোগের লক্ষণ যে এ উপসর্গ দেখা দিলে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এর প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা বেশ কঠিন হতে পারে। কিন্তু লাইফস্টাইলে কিছু অসংগতির কারণেও আপনি ক্লান্ত হতে পারেন, যেমন- রাতে দেরিতে ঘুমিয়ে সকাল সকাল ওঠে যাওয়া, অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানো ও অতিরিক্ত পরিশ্রম করা। ডা. নাজারিও বলেন, ‘আমরা ব্যস্ততম সমাজে বাস করি, একারণে আপনার ক্লান্তি অনুভব হলে তা অতিপরিশ্রম থেকে হচ্ছে কিনা যাচাই করুন।’ কিন্তু আপনি লাইফস্টাইলে অসংগতি খুঁজে না পেলে অথবা ক্লান্তির সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

মাথাব্যথা : আপনি জানেন যে আপনার শরীর ভালো আছে, তাই হঠাৎ করে মাথায় ব্যথা অনুভব করলে ব্রেইন টিউমারের আশঙ্কা নিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু আপনাকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাথার ব্যথা মারাত্মক কিছুর লক্ষণ নয়, এমনকি এ ব্যথা দ্রুত দূর না হলেও, বলেন ডা. আহন। তিনি আরো জানান, ‘অনেক লোকের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন মাথাব্যথা অনুভব হতে পারে, এটি অস্বাভাবিক হলেও বিনাইন বা ক্যানসারমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। টেনশন হেডেকের ব্যথা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।’ মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ ও অন্যান্য স্ট্রেস কমানোর থেরাপি আপনার মাথার ব্যথা কমাতে পারে। কিন্তু আপনার ব্যথা পূর্বের তুলনায় অস্বাভাবিক মনে হলে অথবা ব্যথার তীব্রতায় মাথা কেটে ফেলার ইচ্ছে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে ভিজিট করবেন, পরামর্শ দেন ডা. আহন।

পড়ুন :



ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ