ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মিরপুর বস্তি

ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৮ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক

এম এ রহমান মাসুম : প্রতিদিনের ভাড়া দিয়ে ২০ থেকে ৩০ বছরেই ফ্ল্যাটের মালিক। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আকার হবে ৭২০ বর্গফুট। থাকবে না অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বস্তিবাসীর জন্য আধুনিক সুবিধা দিতেই সরকার নামমাত্র দামে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ১৮ থেকে ২০ শতাংশ।

রাজধানীর মিরপুরে (মিরপুর-১১) আধুনিক সুবিধায় এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের প্রথম ধাপে দুই একর জমির ওপর ১৪ তলা পাঁচটি ভবনে ৫৩৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি আট একর জমিতে আটটি ১৪তলা ভবনে হবে ৯ হাজার ৪৬৭টি ফ্ল্যাট। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে ২০২১ সাল লেগে যেতে পারে।

প্রকল্প পরিচালক ও জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় কুমার মণ্ডল রাইজিংবিডিকে বলেন, কাজ শুরুর আগে ওই এলাকায় বসবাসকারী বস্তিবাসীদের তালিকা করা ও তাদের সেখান  থেকে সরিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রথমদিকে বস্তিবাসী বিশ্বাসই করেনি, ফ্ল্যাট নির্মাণ করার পর তা তাদের নামে বরাদ্দ হবে। সরকারি পর্যায়ে যখন তারা আশ্বস্ত হয়েছেন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পর তারা বিশ্বাস করেছেন। এরপরই নিজেরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এজন্য সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

গৃহায়ন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রথম ধাপে দুই একর জমির ওপর ১৪ তলা পাঁচটি ভবনে ৫৩৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর ভবনের সার্ভিস পাইল ড্রাইভের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। চার নম্বর ভবন পাইল কাস্টিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলা যায়। প্রথম ধাপে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা।

 

ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিকানার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন. প্রকৃতপক্ষে ফ্ল্যাটের যে দাম পড়বে তারা কখনই ক্রয় করতে পারবেন না। তাই সরকার চিন্তা করছে প্রতিদিন ভাড়ার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে কেমন ভাড়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভাড়ার টাকায় তাদের ফ্ল্যাটের মালিকানা দেওয়া। তারা বর্তমানে যে টাকায় ভাড়া দিয়ে বসবাস করছে, সেই টাকা দিয়ে যাতে ২০ বা ৩০ বছরে ফ্ল্যাটের মালিক হন, এরূপ পরিকল্পনা রয়েছে। হতে পারে সরকার এখানে বড় ধরনের ভর্তুকি দিতে পারে। যদিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটা একটি পাইলট প্রকল্প বলতে পারেন।

রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো প্রভাবে প্রকৃত বস্তিবাসীর বঞ্চিত হওয়াও সুযোগ রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু বস্তিবাসীদের তালিকা চূড়ান্ত করেই কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে আগে থেকে বিদ্যমান নিজেদের সমিতি নেতারা তালিকা করতে সহযোগিতা করেছে। তাই অন্য কেউ তালিকায় প্রবেশের সুযোগ নেই।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ১ কোটি ৭২ লাখ ৬১ হাজার টাকা ভূমি উন্নয়নে, ভবন নির্মাণের ব্যয় ১০০ কোটি ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, রাস্তা নির্মাণে ২৭ লাখ ৩৮ হাজার, বাহ্যিক বৈদ্যুতিকরণ ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৮৮ হাজার, মৃত্তিকা পরীক্ষা, অফিস ফার্নিচার, গাড়ি ক্রয় ও মেরামত ইত্যাদিতে ৬৭ লাখ এবং ডেন, কালভার্ট ও রিটেইনিং ওয়াল, সাইট অফিস, প্রধান গেট নির্মাণ, গভীর নলকূপ স্থাপনসহ অন্যন্য ব্যয়ে ২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়ছে।

প্রথম ধাপের প্রকল্পের আওতায় ৫টি ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৪টি বড় ও একটি ছোট ভবন থাকবে। বড় ৪টি ভবনের ১৩ তলার প্রতিটি ফ্লরে ৯টি ফ্ল্যাট হিসেবে মোট ৪৬৪টি ফ্ল্যাট এবং ছোট ভবনটিতে ৫টি ফ্ল্যাট হিসেবে মোট ৬৫টি ফ্ল্যাট নির্মাণ হবে। এভাবে মোট ৫৩৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দপত্র ও চুক্তি দলিল সম্পাদনে অনুমোদিত অগ্রাধিকার তালিকা অনুসারে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বরাদ্দপত্র জারি করবে। অন্যান্য অনুমোদিত শর্তাবলীসহ প্রতি ২ বছর অন্তর ৫ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধির শর্ত পালন সাপেক্ষে ১০ বছর মেয়াদি ভাড়া চুক্তি দলিল সম্পাদন করতে হবে। দুই মাসের অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ সাপেক্ষে ফ্ল্যাটের বাস্তব দখল হস্তান্তর করা হবে।

ভাড়া আদায় পদ্ধতি:

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে নগদে বা নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে বরাদ্দ গৃহীতা রসিদ বা চালানের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ার অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। দৈনিক ভিত্তিতে নগদে বা মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ভাড়া পরিশোদের ব্যবস্থা রাখা হবে। সার্ভিস চার্জ ও ইউটিলিটি বিল ভবন কমিটির নিকট মাসের প্রথামার্ধে নগদ পরিশোধ করতে হবে। তবে অনিয়মিত বা সুনির্দিষ্টভাবে ২ মাস বা ততধিক সময়ের সমপরিমাণ ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে নোটিশ জারি করা হবে। সর্বোচ্চ তিন মাস ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ এবং চুক্তিপত্র বাতিলের সুযোগ থাকবে। আর বাতিলকৃত ফ্ল্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে। তখন কর্তৃপক্ষ অন্য কোনো নিম্ন আয়ের ব্যক্তির কাছে ফ্ল্যাট ভাড়াভিত্তিক পুন:বরাদ্দ প্রদান করতে পারবে।

 

পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ :  

নির্মাণ শেষ হওয়ার পর এটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকবে। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বস্তিবাসীদের নিজেদের একটি সমিতি আছে, তাদেরও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্রকল্পে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া হতে আদায়কৃত অর্থের ৫ শতাংশ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে শেষে ভবিষ্যৎ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট ইত্যাদি স্থানীয় সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ঢাকার মিরপুরে (সেকশন-১১) বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ৫৩৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৭৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। দুই একর জমির ওপর ১৪তলা পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আকার ৭২০ বর্গফুট। দুই বেড বিশিষ্ট ফ্ল্যাটের নিট আয়তন হবে ৬৭৩ বর্গফুট। প্রকল্পে ভবন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় প্রকল্পের কাজে আরো একটু বেশি সময় লাগবে। তবে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে সর্বোচ্চ ৬ মাস বেশি লাগতে পারে। সে হিসেবে ২০২১ সালের ‍জুনের মধ্যে বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

আরো পড়ুন:

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুলাই ২০১৯/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়