ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাল্টে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ৮ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাল্টে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

এসকে রেজা পারভেজ : পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ; সেখান থেকে আওয়ামী লীগ। যুগের সাথে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে যেমন নাম পাল্টে গেছে আওয়ামী লীগের, তেমনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দলটির দৃষ্টিভঙ্গি, কার্যক্রমসহ সার্বিক বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে সময়ের আবেদন মেনে। একাদশ শতাব্দীতে এসে আরেকবার যুগোপযোগী হয়ে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বে দেওয়া এই দলটি।

দলের ২১তম কাউন্সিলকে সামনে রেখে রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে দল সাজাতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। দলটির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে তো বটেই, আগামী কাউন্সিলে তরুণদের জয়জয়কার দেখা যাবে বলে দলটির বেশ কয়েকটি সূত্রের খবর রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে কীভাবে দেখতে চায়, তা নিয়ে কাজ করছে দলটির গবেষণা সেল।  আওয়ামী লীগ চাচ্ছে পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী রাজনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে।

এর অংশ হিসেবে দেশের তরুণ ভোটারদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য করতে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। আগামী ২১ জুলাই থেকে সারা দেশে নতুন ভোটারদের দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির যে কার্যক্রম শুরু করছে, তাতে তরুণদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শভিত্তিক আগামী প্রজন্ম গঠন এবং সমৃদ্ধ-বাংলাদেশ বিনির্মাণের হাতিয়ার হিসেবে তরুণ সমাজকে উন্নয়নমুখী কল্যাণকর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে চায় আওয়ামী লীগ। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও তরুণ দেশকর্মী গড়ে তুলতে সাংগঠনিক এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, সারা দেশে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সংগঠনের প্রতিটি শাখায় নতুন ভোটারদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় তারুণ্যনির্ভর একটি দল। তরুণরাই সবসময় এই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন এই দলের সাধারণ সম্পাদক হন তখন তিনি ছিলেন বয়সে তরুণ। সুতরাং তারুণ্যের জয়গান সবসময়ই গেয়েছে আওয়ামী লীগ।’

‘সরকারের মন্ত্রী পরিষদ, দলের ওয়ার্কিং কমিটি থেকে শুরু করে সর্বত্র তরুণ নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ সবসময় এই চর্চা করে এসেছে। আওয়ামী লীগ বরাবরই যুগের চাহিদাকে প্রধান্য দিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়েছে, ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখবে’, বলেন তিনি।

দলীয় সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে পদার্পণ  উপলক্ষে যুগোপযোগী আওয়ামী লীগ গড়তে দলটির গবেষণা সেল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।  এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দলে তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনা এবং তরুণদের ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে সমর্থন পাওয়ার বিষয়টি। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে  বিশাল জয় পাওয়া গেছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলটির নির্বাচনী থিম সং ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা; নৌকা, নৌকা নৌকা আবার চাই’ একটি তরুণ-কর্মীদের পরিবেশনা। থিম সংটি আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। তরুণদের এমন অনেক পদক্ষেপ ছিল দলটির নির্বাচনী প্রচারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চান দলের তরুণদের সম্পৃক্ত ব্যাপকহারে বাড়ুক। এজন্য তিনি তার বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছেন। চলতি বাজেটেও তিনি তরুণদের জন্য একশ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন।

 

এদিকে এরই মধ্যে ইন্টারনেটে ‘৭০ এ আওয়ামী লীগ, কি ভাবছে তারুণ্য?’-শীর্ষক মতামত জরিপ শুরু করেছে দলটি। ওই জরিপে তরুণদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে তোমার প্রত্যাশা কি?, দেশ পরিচালনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান পদক্ষেপ সম্পর্কে তোমার অভিমত কি?, তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি ও দেশ পরিচালনায় আরো সম্পৃক্ত করতে তোমার পরামর্শ কি?, সরকার পরিচালনায় আওয়ামী লীগকে তুমি কতটা সফল মনে করো?, বিরোধীদলে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে তুমি কিভাবে মূল্যায়ন করবে?

দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সদস্য নবায়নের এবং প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের যে অভিযান শুরু করেছে, সেখানে নবায়নের চেয়ে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ ভোটারদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই শুরু করা এই কার্যক্রম মাঝে বিরতিতে ছিল নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে।  নির্বাচনে বিশাল জয়ের পর আওয়ামী লীগে এখন হাত দিয়েছে যুগের সঙ্গে মানানসই দল গঠনের কাজে। এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়া খুব দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। 

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদে তিন বছর পরপর একেবারে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। ৫ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশ্বাস করে নির্ধারিত ফরমে প্রদত্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ত্রিবার্ষিক ২০ টাকা চাঁদা প্রদান করে ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী-পুরুষ সদস্য হতে পারবে। উপ-ধারায় কারা সদস্য হতে পারবেন, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী, নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারী বা বাতিলকৃত ব্যক্তি নয়; অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়; ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি বা পেশায় বৈষম্যে বিশ্বাস করে না; আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী কোনো সংগঠনের সদস্য নয়- তারা সদস্য হতে পারবেন। এই ধারায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকা ও নিয়মিত চাঁদা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার সদস্য নবায়ন  অন্যবারের তুলনায় বেশ কড়া এবং স্বচ্ছ করতে চাইছে দলটি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এর আগে যতবার সদস্য নবায়ন বা প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের কাজ হয়েছে ততবারই এলাকার প্রভাবশালী নেতা বা এমপিরা সেখানে তাদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য বাছ-বিচার না করে নতুন সদস্য করেছেন। এবার এই বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় তরুণদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে চমক দিয়েছেন, আগামী কাউন্সিলেও বড় ধরনের চমক দেখা যেতে পারে। প্রতিশ্রুতিশীল অনেক তরুণ  নেতা যেমন টাইমলাইনে আসতে পারেন তেমনি ডাকসাইটে চলে যেতে পারেন প্রভাবশালী অনেক নেতা। আগামী বছর স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীর  আগে নতুন যুগোপযোগী এক আওয়ামী লীগ গড়তে প্রতিটি সেক্টরে তরুণদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুলাই ২০১৯/রেজা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়