ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কৃষকের বাজার ব্যবসায়ীর দখলে

একে আজাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ১৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কৃষকের বাজার ব্যবসায়ীর দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া : উত্তরাঞ্চলে প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খুচরা বাজার (গ্রোয়ার্স মার্কেট) এবং পাইকারি বাজার (হোলসেল মার্কেট) তাদের কাজেই আসছে না। এসব বাজারের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। বাস্তবে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের দখলে আছে এসব বাজার।

লক্ষ্য ছিল- এসব বাজারে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বড় পাইকারদের কাছে বিক্রি করবেন। ৩৩টি উচ্চমূল্যের ফসল (ফল, সবজি, মসলা ও দানা শষ্য) বহুমুখীকরণ ও নিবীড়করণের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন, দারিদ্র হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। তবে কৃষকদের অভিযোগ, খুচরা ও পাইকারি বাজার পরিচালনা কমিটির গাফিলতি ও জেলা কর্মকর্তার তদারকি না থাকায় এসব বাজার ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এক যুগ আগে অর্থাৎ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ‘উত্তর-পশ্চিম শষ্য বহুমুখীকরণ (এনসিডিপি)’ প্রকল্পের আওতায় বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৬টি পাইকারি বাজার ও ৬০টি খুচরা বাজার নির্মাণ করা হয়। এতে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। অর্থায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। অত্যাধুনিক বাজারের আদলে প্যাকিং হাউস, গ্রেডিং, শর্টিং, ওয়াশিং ও ড্রাইং ইউনিট, লোডিং-আনলোডিং এরিয়া, স্টোরেজ গোডাউন, নারী কর্নার, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যালয় কাম ট্রেনিং সেন্টার, স্যানিটারি ল্যাট্রিনসহ ড্রেন, রাস্তা ও ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয় এসব বাজারে। বাজার এলাকার এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করবেন। কেউ এসব পণ্য ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যাবেন। এজন্য কৃষকদের কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়।

এই প্রকল্পের আওতায় বগুড়ায় তিনটি খুচরা বাজার (গ্রোয়ার্স মার্কেট) এবং একটি পাইকারি বাজার রয়েছে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় পাইকারি সবজির বাজার মহাস্থানে একটি, শাহাজানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী হাটে একটি ও শেরপুর উপজেলা মির্জাপুরে একটি করে খুচরা বাজার তৈরি করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় পাইকারি বাজার (হোলসেল মার্কেট) নির্মাণ করা হয় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) এলাকায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারগুলো মধ্যস্বত্ববভোগীদের দখলে চলে গেছে। আরডিএ এলাকার পাইকারি বাজারে কৃষকদের পণ্য মজুদ রাখার কথা থাকলেও ঢাকার একাধিক পাইকার তাদের মালামাল মজুদ রেখেছে। মহাস্থান হাটের খুচরা বাজারসহ সব বাজারের নারী কর্নার ১০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

মহস্থানের খুচরা বাজারে আসা শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক কৃষক আমজাদ, কাইয়ুম, রহিম মিয়াসহ বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুরের এরশাদ ও রাজ্জাক জানান, মহাস্থান কলেজের মাঠে অন্য ব্যবসায়ীরা সবজি, মরিচসহ অন্যান্য সবজি কিনে ওই মার্কেট তা সংরক্ষণ করছেন।

তারা আরো জানান, খুচরা বাজারের কথা তারা শুনেছেন। কিন্তু মহাস্থানের খুচরা বাজারটি স্থানীয়দের দখলে।

শাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী হাটের খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী মিন্টু মিয়া নিজস্ব অফিস খুলে বসেছেন। মার্কেটের বিভিন্ন কক্ষ জেলার বাইরে থেকে আসা পাইকারদের ভাড়া দিয়েছেন। পাবনা থেকে আসা এক পাইকার জানান, তিনি দিনে ২০০ টাকা করে দেন মিন্টু মিয়াকে।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে মিন্টু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভাড়া দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, কৃষি বিভাগকে ম্যানেজ করেই তিনি নিজে মার্কেটটি পরিচালনা করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক কৃষক বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে আছে খুচরা বাজার। এগুলো তদারকির কেউ নেই। বিপণন কর্মকর্তা এই বাজারে কোনোদিন এসেছেন, এমন খবরও কেউ জানেন না। বাজার কমিটির কার্যক্রম নেই।

মহস্থান গ্রোয়ার্স মার্কেটের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষকরা ভালো ব্যবসা বোঝেন না। এ কারণেই এসব মার্কেটে বিভিন্ন এলাকার ব্যবাসয়ীরা ব্যবসা করছেন।

গ্রোয়ার্স মার্কেটের এমন বেহাল দশা কেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিপণন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, মার্কেটগুলো মনিটরিং করা হয়। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত যাওয়া হয় না। এছাড়া, জেলা শহরে নারীদের কৃষি ব্যবসায় সম্পৃক্ততা এখনো বিকশিত হয়নি। এ কারণে আমাদের সব মার্কেটে একই সমস্যা। কৃষকদের অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এগুলো আমলে নেন না।


রাইজিংবিডি/বগুড়া/১৩ জুলাই ২০১৯/একে আজাদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়