ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এরশাদের ‘কবর’ নিয়ে টানাটানি

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৪ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এরশাদের ‘কবর’ নিয়ে টানাটানি

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষনা করেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

তবে একসময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর কোথায় হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় এরশাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও দলের নেতাকর্মীরা।

অবশ্য মৃত্যুর আগ থেকেই এরশাদের কবর নিয়ে টানাটানি চলেছে। পরিবার ও নেতাকর্মীদের মাঝে এ নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। চলছে তর্ক বিতর্কও। স্ত্রী রওশন, ছোটভাই জিএম কাদেরসহ দলের বৃহৎ অংশ ঢাকায় চাইলেও রংপুরের নেতাকর্মীরা চান রংপুরে এরশাদকে সমাহিত করতে। সম্প্রতি দলের প্রেসিডিয়াম সভায়ও এরশাদের কবর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

জানা গেছে, বনানীতে সেনা কবরস্থানে সমাহিত করা হতে পারে এরশাদকে। এজন্য একপ্রকার সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নাকি সম্মতি রয়েছে। সেখানে না হলে শেষ পর্যন্ত রংপুরের পল্লী নিবাসেও তাকে দাফন করা হতে পারে।

কোথায় কবর দেয়া হবে তার সবকিছুই নির্ভর করছে এরশাদের পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর। স্ত্রী রওশন এরশাদ চান ঢাকায় তার স্বামীকে সমাহিত করা হোক। বনানীর কবরস্থানে সেটা হতে পারে। আর সেখানে যাতে নেতাকর্মী সবাই যেতে পারেন। ছোটভাই জিএম কাদেরও চান ঢাকায় হোক। সেটা সেনা কবরস্থান কিংবা অন্য যে কোন স্থানে হতে পারে।

দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীও চান ঢাকায় যেন তাদের প্রিয় নেতার কবর হয় যাতে তারা যেতে পারেন। কারণ এরশাদ একজন জনপ্রিয় জাতীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান। এসব বিষয় মাথায় রেখে এরশাদের কবর ঠিক করার কথা বলেছেন নেতাকর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদের বলেন, হাতে বেশ কয়েকটা চয়েজ আছে। দেখা যাক কি হয়। কোথায় দেয়া যায়। তবে রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনা প্রধান হিসেবে বিবেচনা করে তিনি সেনা কবরস্থানে দেয়ার বিষয়ে মত দেন।

তিনি বলেন, বড় ভাই ঢাকায় সেনা কবরস্থানে সমাহিত করার কথা বলেছিলেন। রংপুরের পল্লী নিবাসে এরশাদের অছিয়ত সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার জানা নেই। বরং আমাকে সেনা কবরস্থানের কথা বলেছিলেন। তারপরও দেখা যাক। কোথায় দেয়া যায় পারিবারিকভাবে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু বাবলা এমপি জানান, বঙ্গবন্ধু জাতির জনকের পরে স্যার (এরশাদ) দেশের জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি। এমন একজন অবিসংবাদিত জাতীয় নেতার কবর ভেবে চেন্তে দেয়া উচিত। ঢাকায় কবর দিলে সবার জন্য ভাল হবে। দেশের যে কোন মানুষ ও  নেতাকর্মী তার কাছে ছুটে যেতে পারবেন।

দলের একটি সূত্র জানায়, রংপুরে এরশাদের কবর দেয়া নিয়ে রংপুরের নেতাকর্মীরা একাট্টা। তাদের সঙ্গে এরশাদের আত্মীয় স্বজনও আছেন। তারা কোনভাবেই এরশাদকে ঢাকায় কবর দিতে নারাজ। তারা যে কোন মূল্যে এরশাদের কবর রংপুরের পল্লীনিবাসে নিয়ে যেতে চান। প্রয়োজনে তারা এরশাদের লাশ ঢাকা থেকে রংপুরে নিয়ে যাবেন। সিএমএইচে কখন এরশাদ মারা যাচ্ছেন এতদিন সেখানে সতর্কদৃষ্টি রাখছিলেন এসব নেতাকর্মী। কিভাবে লাশ রংপুরে নিয়ে যাবেন এই অপেক্ষায় রয়েছেন।  তাদের একটি অংশ এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর  সিএমএইচে ভিড় করেছেন তাদের অনেকেই। সুযোগ পেলে তারা নাকি এরশাদকে নিয়ে যাবেন রংপুরে। সম্ভব না হলে যখন জানাজা পড়াতে রংপুরে এরশাদকে নিয়ে যাওয়া হলে তখন লাশ রেখে দেবেন। এরশাদের লাশ ঢাকায় আনতে দেবেন না তারা। এমন পরিকল্পনার কথাও শোনা যাচ্ছে।

সূত্রমতে, এরশাদের অন্যান্য ভাই, আত্মীয় স্বজন ও রংপুরের নেতাকর্মীরা চায়, রংপুরে এরশাদের হাতে গড়া পল্লীনিবাসের কমপ্লেক্সে কবর দিতে। এরশাদের নাকি ইচ্ছা ছিল ওখানে সমাহিত হওয়ার। এমন অছিয়তের কথাও বলা হচ্ছে। সেখানে এরশাদ কবরের জায়গাও ঠিক করে দিয়েছেন।

এরিকের মা বিদিশা এরশাদ মনে করেন, এরশাদের অছিয়ত মেনে তাকে রংপুরে নিজের পল্লীনিবাসে সমাহিত করা উচিত। সেখানে দিলে এরিকও শান্তি পাবে। রংপুরের নেতাকর্মীরাও খুশি হবে। অন্তত তার কবর নিয়ে বিতর্ক তোলা কিংবা রাজনীতি করা আমাদের উচিত হবে না।  

তিনি বলেন, স্যারকে রংপুরে সমাহিত করার ব্যাপারে রংপুরের প্রতিটি মানুষ একমত। আমিও তাদের অনুভূতির সাথে একমত পোষন করছি। আর যেহেতু পল্লী নিবাসটি স্যার এরিক এরশাদকে দিয়ে গেছেন সেহেতু তাকে পল্লী নিবাসে সমাহিত করা হলে এরিক সবচেয়ে সম্মানিত হবে। রংপুরের মানুষের অনুভূতিকে এরিক সম্মান জানাবে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর জানান, পল্লী নিবাসেই স্যারকে সমাহিত করা হবে বলে আশা করছি। রংপুরে থেকেই তিনি যেহেতু জাতীয় ও বিশ্বনেতা। সে কারণে তাকে ঢাকাতে সমাহিত করা হলে তিনি জাতীয় নেতার মর্যাদা পাবেন-এটা ভুল ধারণা।

‘‘জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিাপাড়ায় হয়েছে। তাতে কি তিনি জাতীয় নেতার মর্যাদা পাচ্ছেন না। দেশে বিদেশে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি। একইভাবে জাতীয় নেতা হিসেবে ঢাকায় এরশাদকে সমাহিত করতে হবে এই আইডিয়া ঠিক নয়। রংপুরের মানুষ স্যারকে যেভাবে ভালোবেসেছে তা ইতিহাসে বিরল- এখানে কবর দেয়া হলে প্রতিদিন মানুষের ঢাল নামবে – আশা করেন তিনি।

এরশাদের পারিবারিক নিবাস রংপুর শহরের সেনপাড়ায় স্কাইভিউতে হলেও তিনি নিজে জমি ক্রয় করে রংপুর শহরের দর্শনায় মহাসড়কের পাশে দেড় একর পল্লী নিবাস নামে তার নিজস্ব আবাসন তৈরি করেন। রংপুরে সফরে আসলে তিনি সেখান থেকেই রাতযাপনসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।

গত বছর অক্টোবর মাসে পল্লী নিবাসের পুরোনো স্থাপনা ভেঙ্গে একটি আধুনিক বাড়ি নির্মানও শুরু করেন তিনি। বাড়িটির নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। পল্লী নিবাসের পাশেই তিনি পিতার নামে মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল ডায়াবোটিকস হাসপাতাল ও ডায়াগোলোস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে স্বল্পমুল্যে অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি জায়গাটি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার সন্তান এরিক এরশাদের নামে বন্দোবস্ত করে দেন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুলাই ২০১৯/নঈমুদ্দীন/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়