কারামুক্ত হতে পারবেন কি মিন্নি-মিতু?

মেহেদী হাসান ডালিম : একদিন আগে পরে জামিন হওয়া বহুল আলোচিত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও তানজিলা হক চৌধুরী মিতু আদৌ কি কারামুক্ত হতে পারবেন? এ নিয়েই চলছে আলোচনা সমালোচনা ঝড়। কেননা রাষ্ট্রপক্ষ এ দুজনের জামিন ঠেকাতে তৎপর।

দুই জনই স্বামী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ও বহুল আলোচিত। সাধারণের কাছে তারা সহানুভুতিও পাচ্ছেন আবার ভিলেন হিসেবেও মূল্যায়িত হচ্ছেন। মাত্র একদিন আগে পরে স্বামী হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত মিন্নি ও মিতুর স্থায়ী জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর এটা নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শু্রু হয়েছে ট্রল।

হালে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন আলোচিত বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও চট্রগ্রামের ডাক্তার আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় আটককৃত আসামি তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সরব তাদের দৃষ্টি থেকে যেন কোন কিছুই এড়ানো দায়! একই সময়ে দেশের দুই আলোচিত মামলার আসামি জামিন পাওয়ায় শিকারী এসব সমালোচকদের মতামতে সামাজিক মাধ্যম এখন গরম!

এদিকে মিতু-মিন্নির জামিন ঠেকাতে তৎপর হয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। 

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ‍সুত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন তারা।

এ বিষয়ে মিন্নিকে জামিন দেওয়া হাইকোর্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে মিতুকে জামিন দেওয়া হাইকোর্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গিয়াস উদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, গত বুধবার হাইকোর্ট মিতুকে জামিন দিয়েছেন। আমি ওইদিনই মিতুর জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করতে নোট দিয়েছি। আশা করছি ২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে জামিন স্থাগিতের আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।

গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে থাকাকালে গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলা যাবে না বলে শর্ত দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

এর আগের দিন গত ২৮ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে স্থায়ী জামিন দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।

মিতুর জামিন বিষয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি কাজী ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

রিফাত হত্যা মামলায় ১৬ জুলাই সকালে মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯ টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অপর দিকে গত ৩১ জানুয়ারি সকালে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসায় মোস্তফা মোরশেদ ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শিরায় বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন। তার আগে স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন রাতে চিকিৎসক দম্পতির মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার ভোররাত চারটার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান তানজিলা।

পরে স্ত্রীর সমালোচনা করে স্বামী মোস্তফা মোরশেদ ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, ‘আমাদের দেশে তো ভালোবাসায় চিটিংয়ের শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম, আর আমি চিরশান্তির পথ বেছে নিলাম।’

ওই দিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরের নন্দনকানন এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তানজিলাকে আটক করে।

আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মোস্তফা মোরশেদের স্ত্রী, শ্যালিকা, দুই বন্ধুসহ ছয়জনকে আসামি করে ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন চিকিৎসকের মা জোবেদা খানম। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা মানসিক যন্ত্রণা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করায় আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মৃত্যুর মুখে পড়েন মোস্তফা মোরশেদ। ২০০৯ সালে তানজিলার সঙ্গে মোস্তফার প্রেমের সম্পর্ক হয়। ২০১৬ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকেন তানজিলা। কিন্তু বিয়ের আগে ও পরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। মোস্তফা বিষয়টি জানার পর তার শ্বশুর-শাশুড়িকে জানান। তবে তারা শোধরানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো মোস্তফাকে শাসাতে থাকেন। তানজিলার বোন সানজিলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানাভাবে মোস্তফাকে হুমকি দিয়ে মানসিক যন্ত্রণা দিতে থাকেন। এই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন মিতু। পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ আগস্ট ২০১৯/মেহেদী/নবীন হোসেন