শিশুপার্কে কচ্ছপ গতির কাজ, কবে খুলবে অনিশ্চিত
ছবি: শাহীন ভূঁইয়া
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে রাজধানীতে যতটা খোলামেলা জায়গা ও বিনোদন কেন্দ্রের প্রয়োজন, তা নেই। এই না থাকার মধ্যে শুধু রাজধানীর শিশুরা নয়, দেশের অন্যান্য জেলার শিশুদের জন্য অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ছিল শাহবাগ শিশুপার্ক। মা-বাবা বা স্বজনদের সঙ্গে এখানে শিশুরা এসে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াত। চড়তো হরেক রকম রাইডে।
সংস্কারের জন্য এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এই পার্কটি। সংস্কার শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। তবে কাজের গতি বিবেচনায় সংস্কার শেষ হয়ে কবে চালু হবে, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গায় ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শিশুপার্ক। ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে পার্কটির তত্বাবধান করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পার্কে বিভিন্ন ধরনের ১২টি রাইড রয়েছে। এছাড়া ১৯৯২ সালে বিমান বাহিনীর সৌজন্যে দেয়া একটি জেট বিমানও শিশুপার্কে রয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শিশুপার্কে আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিং, ওয়াকওয়ে, আন্ডারপাস, মসজিদ, আধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়ন, খাবারের দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। যদিও ১১ মাস আগে শিশুপার্ক বন্ধ করে আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। এর আগে পার্কের উন্নয়নে নকশা ও আনুষাঙ্গিক করা হয়।
সরেজমিনে শাহবাগ শিশুপার্ক ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ভবনের কাজ চলছে। বেসমেন্ট ও প্রথম তলার কাজ কিছুটা দৃশ্যমান হয়েছে। এছাড়া পার্কের চারপাশে শুধু ধ্বংসস্তুপ। কোথাও মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। পার্কের এক পাশে বিমানবাহিনীর দেয়া জেট বিমানটি রাখা রয়েছে। অল্পসংখ্যক শ্রমিকদের সেখানে কাজ করতে দেখা গেছে।
এদিকে রোববার ও সোমবার পার্ক এলাকায় পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে অনেক অভিভাবক শিশুদের পার্কে নিয়ে এসেছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবাই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। কিন্তু তারা জানেনই না পার্কের সংস্কার কাজ চলায় বন্ধ রয়েছে।
সোমবার ধানমন্ডি থেকে ওবায়দুর রহমান তার দুই ছেলেকে নিয়ে এসে পার্ক বন্ধ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ছোট ছেলের জন্মদিন হওয়ায় ঘুরতে নিয়ে এসেছি। এসে দেখি পার্ক বন্ধ। কিন্তু এই তথ্যটা জানতাম না। কোথাও বন্ধের প্রচারও দেখিনি।
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা ফাওয়াদ হাসান নামে একজন তার ছোট বোনকে নিয়ে ঘুরতে এসে বন্ধ দেখতে পান। তিনি বলেন, বন্ধ থাকায় তাকে শ্যামলী শিশু মেলায় (ডিএনসিসি ওন্ডারল্যান্ড) নিয়ে যাব। কি আর করা। একটু ভোগান্তি হবে।
পার্কের কাজ কবে শেষ হবে সে বিষয়ে ডিএসসিসির কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে শিশুপার্কের কাজ শেষ হলে, ২০২১ সালের দিকে এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে।
পার্ককেন্দ্রীক ব্যবসায় ভাটা :
পার্কের সামনে খাবার দোকান, চটপটি-ফুচকা, শিশুদের খেলনাসহ নানান ধরনের ব্যবসা গড়ে উঠেছিল। প্রায় ১০ মাস ধরে এখানে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যত দ্রুত শিশুপার্ক খুলে দেয়া হবে, তত তাদের ব্যবসার জন্য মঙ্গল।
চটপটি বিক্রেতা মাসুদ গত আট বছর ধরে শিশুপার্কের সামনে ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, এ বছরই তার সবচেয়ে খারাপ ব্যবসা চলছে।
আরেক ব্যবসায়ী মো. আমিন জানান, পার্ক বন্ধ হওয়ার পর অনেকে না জেনে চলে আসেন। কিন্তু যখন দেখে বন্ধ তখন আশপাশের কোথাও চলে যান। এখানে বসেন না।
আচার বিক্রেতা রুবেল বলেন, আগে ব্যবসা ভালো ছিল। কিন্তু মন্দা যাচ্ছে। ভালো ব্যবসার জন্য পার্ক আবার চালু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকা/নূর/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন