ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

২ শতাংশ নগদ সুবিধাতেও তেমন সাড়া নেই

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ১০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২ শতাংশ নগদ সুবিধাতেও তেমন সাড়া নেই

খেলাপি ঋণের ২ শতাংশ নগদে পরিশোধ করে ঋণ নিয়মিত করার প্রক্রিয়ায় সাড়া পাচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। অর্থমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করলেও এ বছর মোট ঋণখেলাপির ২০ শতাংশের মতো এ সুবিধার আওতায় আসতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত বুধবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতেই খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে অনেকেই ধারণা করছে যে, ভালো-মন্দ এক হয়েছে যাচ্ছে। কিন্তু ভালো-মন্দ কখনো এক হবে না।

অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা ২ শতাংশ দেবে তারা আবার ব্যবসা করতে পারবে। কারণ, তাদের ব্যবসা করতে হলে আবার ঋণের প্রয়োজন হবে। আর যারা ভালো তাদের তো কোনো এক্সট্রা ডিপোজিট বা ঋণ লাগবে না। তবে সবাই যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তাহলে সবাই দিতে পারবে।

তিনি বলেন, খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগে ২ শতাংশ কোনো বিষয় না। ২ শতাংশ শর্ত মেনেই তারা ঐক্যমত পোষণ করবে যে, তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তারা এই শর্ত বাস্তবায়ন করার জন্য এগিয়ে আসবে। আমরা এক্ষেত্রে একটি কাজ করতে চাচ্ছি, সেটা হলো- কাউকে জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতে। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের সবাইকেই  টাকা ফেরত দিতে হবে। যেভাবেই হোক এ টাকা আমরা আদায় করবই। এগুলো রাষ্ট্রের সব মানুষের টাকা। তবে আমরা সময়টা একটু বাড়িয়ে দিয়েছি।

এদিকে, এ প্রক্রিয়ায় আসতে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজারদের সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংকের খেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ নগদে দিয়ে প্রায় ১ হাজার খেলাপি পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটের সুবিধা নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এতে বছর শেষে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা।

এককালীন এক্সিট নীতিমালায় নগদ ছাড়া খেলাপি ঋণ গ্রহণকারীদের প্রস্তাব নিষ্পত্তিকরণের জন্য ন্যুনতম ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদে জমা নেয়া ছাড়া কোনো আবেদন প্রহণ করা যায় না। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে সম্প্রতি শাখাগুলোতে তিন পৃষ্ঠার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যাতে পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার আওতায় সুদ মওকুফ বা পুনঃতফলিস সুবিধাপ্রাপ্তির যোগ্য হন সেজন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়।

সোনালী ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নগদে জমাকৃত ডাউন পেমেন্ট ২ শতাংশের নিচে হলে পত্র মারফত তা আবেদনকারীকে ফেরত দিতে হবে এবং ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে প্রাপ্তিস্বীকারমূলক স্বাক্ষর করিয়ে তা অবশ্যই শাখায় সংরক্ষণ করতে হবে। তবে বিভিন্ন শাখা অফিসে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীদের ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। তারা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নিয়মিত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু শাখা ব্যবস্থাপকরা ঠিক সেভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন না।

ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার আওতায় প্রস্তাব নিষ্পত্তি করার জন্য এ সার্কুলার লেটারের পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে এক বছর মরটারিয়াম পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর ও এককালীন এক্সিট সুবিধা দেয়া হয়েছে। পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৬০ দিনের মধ্যে আদায় সাপেক্ষে ঋণখেলাপিদের প্রস্তাব প্রণয়ন করতে কথা বলা হয়েছে। মরটারিয়াম অর্থ ১০ বছর পর্যন্ত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনো ধরনের সুদ দিতে হবে না।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার আওতায় সুদ মওকুফসহ পুনঃতফসিল প্রস্তাব অনুমোদনের প্রায়োগিক ক্ষমতা দুই রকম হবে। সোনালী ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ক্ষমতা ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত প্রস্তাব নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে মূল ঋণের পরিমাণ যাই হোক না কেন, আরোপিত সুদ (ইন্টারেস্ট সাসপেন্স হিসাবে রক্ষিত) ও অনারোপিত সুদসহ মোট মওকুফযোগ্য সুদের পরিমাণ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া, স্থানীয় কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত প্রস্তাব নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে মূল ঋণের পরিমাণ যাই হোক না কেন, আরোপিত সুদ ও অনারোপিত সুদসহ মোট মওকুফযোগ্য সুদের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত।

সোনালী ব্যাংকের সূত্র জানায়, মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এককালীন এক্সিট সুবিধার আওতায় ৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নিয়মিত হওয়ার বিষয়ে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।


ঢাকা/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়