ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দুর্ভোগের অপর নাম ইজিবাইক

মাইনুদ্দীন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্ভোগের অপর নাম ইজিবাইক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনদিন ইজিবাইকের ব্যবহার বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে জ‌্যাম-দুর্ভোগ।

শহরের কাউতলী থেকে মেড্ডা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কে যত্রতত্র ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়। এ ছাড়া শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা ঘোড়াপট্টির জোড়াসেতু এখন ইজিবাইকের স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে সড়কের উভয় পাশে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা গেছে, সাত বছর আগে ২০০ ইজিবাইকের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। তবে অবৈধভাবে নেমেছে আরো কয়েক হাজার। দিনদিন বাড়ছে অনুমোদনহীন এসব ইজিবাইকের চলাচল।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে চালক ও ইজিবাইককে নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য আবেদনপত্রের আহ্বান জানায় পৌরসভা। ইজিবাইক গাড়ি ও চালকসহ প্রায় দুই হাজার ৪০০ আবেদন জমা পড়ে। বর্তমানে নিবন্ধনহীন অন্তত সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার ইজিবাইক শহরের বিভিন্ন রাস্তায় চলাচল করছে। যানজটও প্রতিদিন তীব্র আকার ধারণ করছে।

গত সোম ও মঙ্গলবার (৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের প্রধান সড়কের কাউতলী মোড় থেকে মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে ইজি বাইকের সবচেয়ে বেশি চলাচল।

এই সড়কের টিএ রোড সংলগ্ন গোড়াপট্টি সেতুর (ফকিরাপুল) উপর প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সেতুর উপরের দক্ষিণ অংশের রাস্তায় এলোমেলোভাবে ইজিবাইক দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি পথচারীদের চলাচলের জন‌্যও কোনো জায়গা নেই।

শুধু এ সড়কেই নয়- শহরের ডাকবাংলো মোড়, রেলগেইট, জেলা পরিষদ মার্কেট, কালীবাড়ি মোড়, মঠের গোড়া, পুরাতন কাচারি মোড়, হাসপাতাল রোড, কুমারশীল মোড়, কালাইশ্রিপাড়া, রামকানা হাইস্কুল পুকুর সংলগ্ন সড়কেও একই রকম দৃশ্য দেখা যায়।

এসব সড়কে ইজিবাইকের জন্য প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের সব রাস্তায় এলোমেলোভাবে ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকে। পাশাপাশি শহরের পুরাতন জেলা রোড, টেংকের পাড় মোড়, কালীবাড়ি মোড়-গোকর্ণ সড়ক, কালিবাড়ি মোড় থেকে শিমরাইলকান্দি পর্যন্ত এলাকা এবং বাইপাস সড়ক কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সদর উপজেলার সুহিলপুর থেকে ভাদুঘর পর্যন্ত সড়কে অবাধে ইজিবাইক চলাচল করতে দেখা গেছে।

এছাড়া গোড়াপট্টির সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ইজিবাইকের অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠায় সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে- নাসিরনগর, সরাইল, আশুগঞ্জ, বিজয়নগর উপজেলাসহ সদর উপজেলার উত্তরাংশের অধিকাংশ লোকজন ঘাটুরা-মেড্ডা সড়ক ব্যবহার করেই শহরের ভেতরে প্রবেশ করে। সুহিলপুর, ঘাটুরা, মেড্ডা থেকে আসা ইজিবাইকগুলোকে এই পাইকপাড়াস্থ রামকানাই হাই স্কুলের মোড় পর্যন্ত আসে।

এই মোড় অতিক্রম করেই শহরের ভেতরের সড়ক সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজ, সদর মডেল থানা, পৌরসভা, বিভিন্ন ব্যাংক, মাতৃসদন কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে যেতে হয়। মাত্রাতিরক্ত ইজিবাইকের জন্য প্রতিনিয়ত শহরের এসব এলাকার সড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে।

শহরের অন্তত ১৫-২০জন ব্যক্তি জানান, শহরের সবক’টি সড়কজুড়ে ইজিবাইকের চলাচল। রাস্তার মোড়গুলোতে অবৈধ স্ট্যান্ডে সারাদিনই যানজট লেগে থাকে। তাছাড়া রাস্তার মাঝখানেই ইজিবাইক থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়।

শহরের পাইক পাড়া এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরো শহর যেন ইজিবাইকের দখলে। ইজিবাইকের ভাড়া কম, এতে যাতায়াতের সময়ও বাঁচে। তবে ইজিবাইকের চালকরা নিয়ম কানুন বোঝেন না। এমনকি ১২/১৩ বছরের শিশুদেরও চালকের আসনে দেখা যায়। নিজের মন মতো গাড়ি চালায় তারা।

‘অদক্ষ চালক ও অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইকের কারণে প্রতিদিন ছোট-বড় অসংখ‌্য দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকেই গুরুতর আহত হচ্ছেন। অথচ এসবের কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।’’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ হানান জেনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন শহরে ইজিবাইক নিষিদ্ধ। চালকদের ট্রাফিক সম্পর্কিত কোনো জ্ঞান নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হোক।’

ট্রাফিক পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা প্রায়ই অভিযান চালনা করি। তবে ইজিবাইকের চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না। নাগরিকদেও সচেতন হতে হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ইজিবাইক যাতে শহরে প্রবেশ না করে নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত যাতয়াত করে সে ব‌্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়