‘এনআইডি পেতে এত সমস্যা’
মোহাম্মদ নাজমুল হক, আমেরিকা প্রবাসী। তার শৈশব, কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন পরিচয়পত্রের জন্য। কিন্তু পরিচয়পত্র নিতে তাকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
নাজমুল হক বলেন, ‘প্রায় ২২ বছর বাংলাদেশে থেকেছি। লেখাপড়া করেছি। নিজ এলাকায় বড় হয়েছি। তারপরও কেনো আমাকে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে এতো সমস্যা হচ্ছে? বাংলাদেশি হয়েও পরিচয়পত্র পেতে এতো সমস্যা—অথচ আমি যে দেশে থাকি, তারা খুব সহজেই আমাদের নাগরিক করে নিয়েছে। তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। ’
তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি ২৫ বছর আগে ডিবি লটারি পেয়ে আমেরিকা গিয়েছিলাম। মাঝে দু—একবার এসেছিলাম দেশে। কিন্তু তখন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করিনি। ভেবেছি নিজের দেশ তাই যেকোনো সময় আবেদন করলেই এনআইডি কার্ড পাওয়া যাবে। কিন্তু দেশে কোনও কাগজপত্রের জন্য অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় তা এখন বুঝতে পাচ্ছি। ’
নাজমুল হক বলেন, ‘আমার আমেরিকার পাসপোর্ট থাকায় বাংলাদেশের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়নি। কিন্তু দেশে আসছি। পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন করতে গেলে এনআইডি কার্ড লাগবে। নয়তো পাসপোর্ট করা যাবে না। পরে আমি পিরোজপুরে আমার এলাকায় নির্বাচন অফিসে গেলে আমাকে জানায়, বাংলাদেশি পাসপোর্ট লাগবে বা দ্বৈত নাগরিক হওয়ার জন্য একটি ছাড়পত্র লাগবে নয়তো এনআইডি কার্ড করা যাবে না। পরে সেখানকার একজন আমাকে কয়েকদিন ঘুরিয়েছেন। বলেছেন তিনি নাকি আমার এনআইডি করে দেবেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু না হওয়ায় আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনে আসি। ’
তিনি বলেন, আমি লেখাপড়া তেমন করিনি। আমার স্কুল সার্টিফিকেটও নেই। এছাড়া আমার জন্ম নিবন্ধন পত্র, নাগরিক বা চেয়ারমানের সনদপত্র, মা বাবার এনআইডি কার্ড এগুলো সবই আছে। এর থেকে আর কি কাগজ আমি দেবো? আমেরিকায় নাগরিক হয়েছি—সেখানে এতো কাগজপত্র জমা দেওয়া লাগেনি। অথচ বাংলাদেশি হয়েও পরিচয়পত্র পেতে এত ভোগান্তি।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শাহানুর হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমার এখানে নিয়মের বাইরে কোনো কিছুই হয় না। যথাযথ কাগজপত্র না দিলে আমরা কোনো আবেদন নিচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়াই আছে আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকলে কোনো আবেদন গ্রহণ না করতে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক মো. আবদুল বাতেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা প্রবাসী ভোটারদের ক্ষেত্রে সব সময় একটু বেশিই যত্নবান। তাদের নতুন ভোটার তালিকায় হালনাগাদের ক্ষেত্রে ছোট ভুলগুলো আমরা ধরি না। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের বলা আছে ছোটখাট ভুল না ধরতে। এছাড়া এখন মুজিববর্ষ চলছে। তাই আমরা জেলা পর্যায়ে বা মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সহজ করার জন্য। অনেকেই এখনো ভোটার হননি বা অনেকেরই এনআইডি কার্ড নেই। তাদের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এই কার্যক্রম সহজ করবে সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা চাই বাংলাদেশের সব নাগরিকের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকুক।
নাজমুল হকের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে কেন আবেদন জমা নেয়নি কারণ জানা নেই। যদি প্রবাসীদের নতুনভাবে পরিচয়পত্র পেতে হয় সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হবে। ওই ব্যক্তি যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, কিন্তু সে জন্মসূত্রে বাঙালি—তাহলে তাকে অবশ্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দ্বৈত নাগরিক হওয়ার ছাড়পত্র আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে বা তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এগুলো না থাকলে তার আবেদন জমা নেওয়া হবে না এমন নিয়মই রয়েছে।
ঢাকা/ হাসিবুল/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন