ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আবাসিকে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা, লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা নেই

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবাসিকে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা, লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা নেই

করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। অফিস-আদালত এবং অধিকাংশ কলকারখানা এখন বন্ধ। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে মানুষ এখন বাসায় অবস্থান করছে। এসব কারণে গত কয়েক সপ্তাহে দেশে শিল্পখাতের বিদ্যুতের চাদিহা কমেছে। তবে আবাসিক লোডের চাপ বেড়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়তি এ চাহিদার কারণে কোনোভাবে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা নেই। কারণ, মোট চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে দেশে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন দুটিই কমেছে। তবে বাণিজ্যের বিদ্যুৎ লোডের চাপ কমে যাওয়ায় এটি সমন্বয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। যদিও শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও শোডশেডিংয়ের সমস্যা ছিল না এখন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র আরো জানায়, করোনা সংক্রান্ত আপদকালীন সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের।

জানা গেছে, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১১ হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট (দিনে) এবং সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৫২ মেগাওয়াট। শনিবার (৪ এপ্রিল) দিনের বেলায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে ৭৮০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যায় চাহিদা কিছুটা বেড়ে হবে ৯৮০০ মেগাওয়াট। অর্থ্যাৎ, চাহিদার তুলনায় দেশে এ সময়ে উৎপাদন বেশি। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দিনেরবেলায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৭৮২২ মেগাওয়াট। সন্ধ্যায় চাহিদা কিছুটা বেড়ে হয় ৮৭৩৪ মেগাওয়াট।

এদিকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিকল্প ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা এবং বোর্ডের সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আবাসিকে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে এটি সত্যি। কিন্তু এর কারণে কোনোভাবেই লোডশেডিং হবে না।

আবাসিকে চাহিদা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অফিস আদালত বন্ধ হওয়ার কারণে বাণিজ্যের বিদ্যুৎ লোডের চাপ কমে গিয়ে আবাসিক বেড়ে গেছে। বাণিজ্যে বিদ্যুতের চাহিদাটা এখন আবাসিক চাহিদায় রূপান্তরিত হয়েছে।

সচিব বলেন, খাতা-কলমে হয়তো দেখা যাবে চাহিদার থেকে কিছু বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। কিন্তু এটা প্রকৃতচিত্র না। আমাদের সক্ষমতা আরও অনেক বেশি, এমনকি কয়েকদিন আগেও আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতো। এখন চাহিদা নেই, তাই উৎপাদনও কমানো হয়েছে জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ কম রাখা হচ্ছে।

তিনি জানান, শনিবার বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে ৭৮০০ মেগাওয়াট। একটু বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উপাদনের জন্য কম খরচের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে এখন। এতে খরচ কমছে, আবার চাহিদাও যোগান হচ্ছে।

তিনি জানান, বিদ্যুতের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্রগুলো চলে এবং বন্ধ হয়। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলে যখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে তখন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখা হতো। এখন যেহেতু শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ, তাই বেশি খরচের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়। তবে সবসময় রাতের বেলা চাহিদাটা বেড়ে যায়, কারণ রাস্তার লাইটিং চালু করা হয়। তবে বর্তমানে সবসময় চাহিদার চেয়ে বেশি থাকছে উৎপাদন।

এদিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অপারেশন) মুকুল হোসেন জানান, শহরের মতো পল্লী অঞ্চলের গ্রাহকরাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, একসময় বলা হতো, শহরে বিদ্যুতে স্বস্তি থাকলেও পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুতের দুর্ভোগ রয়েছে। এ কথা এখন আর শোনা যায় না। কারণ বিদ্যুতের আওতাধীন সবাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।

গত ২ মার্চের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১১০টি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৮৪৫ মেগাওয়াটের বেশি। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৬২৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎগ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৫৬ লাখ, এবং সেচ সংযোগ সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার।

এদিকে, শনিবার (৪ এপ্রিল) রাত ৮টা ১৫ মিনিটে রামপুরা এলাকায় ২০ মিনিটের লোডশেডিং হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা (চিফ স্টাফ অফিসার টু চেয়ারম্যান) মনিরুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, এলাকাটি ডিপিডিসি'র অনুকূলে। কারিগরি ত্রুটির কারণে এটা হয়েছে। আশা করছি এখন থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকবে।

 

ঢাকা/হাসান/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়