ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা নির্ধারণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২০, ১৫ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা নির্ধারণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট মন্দা কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো ২০১৯ সালের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ এবং নগদ ও বোনাস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

ব্যাংগুলোর মূলধন ও তারল্য জোরদার করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের দীর্ঘ মেয়াদে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, স্বল্প মেয়াদের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যে কয়েকটি ব্যাংক সীমার অধিক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, এখন তাদেরকে তা সমন্বয় করতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিনিয়োগকারীরা। আর ব্যাংকগুলোর ঘোষণা করা লভ্যাংশ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা যাবে না। ফলে একদিকে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশার চেয়ে কম লভ্যাংশ পাবেন। অন্যদিকে, লভ্যাংশ পেতেও দেরি হবে। পক্ষান্তরে দীর্ঘ মেয়াদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ কম দিলে তাদের মূলধন ঘাটতি কম থাকবে। এতে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়বে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো লোকসানে রয়েছে। নগদ লভ্যাংশ প্রদানের কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিতে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এমন ধারণা থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর একটু শক্তিশালী হবে। তবে এ সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাতে ভালো ব্যাংকগুলোর শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর সেসব ব্যাংক ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে, সেদিক বিবেচনায় অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন। এখন লভ্যাংশ কমিয়ে দিলে ওই বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীরা কম লভ্যাংশ পাওয়ার পাশাপাশি দেরিতে লভ্যাংশ পাবেন।’

ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এ নির্দেশনায় দুটি বিষয় রয়েছে। ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা অসন্তুষ্ট হবেন। এ ক্রান্তিলগ্নে বিনিয়োগকারীদের এটা হতাশার কারণ। অন্যদিকে, ব্যাংকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংক সাপোর্ট পাবে। ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ালে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হবে। সার্বিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা হতাশাজনক।’

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে দেখে মনে হতে পারে শেয়ারহোল্ডারা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা ভালো হবে। এ মুহূর্তে যদি ব্যাংকগুলো টিকে থাকতে না পারে তাহলে সার্বিকভাবে ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যেসব ব্যাংক ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন করছে, তারা সীমারেখার মধ্যে ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেটার কারণে পুঁজিবাজারে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এমটিবি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। পুঁজিবাজারের দিক বিবেচনায় আমরা চাইব, ব্যাংকগুলো যাতে নগদ লভ্যাংশ দেয়। কারণ, ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও  মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ আসলে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হতো। কিন্তু সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল রয়েছে। এর মধ্যে যদি নগদ টাকা চলে যায় তাহলে ব্যাংকগুলোর মূলধন দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় অনেক বিনিয়োগকারী বিভিন্ন ব্যাংকে বিনিয়োগ করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন ব্যাংকগুলো মুনাফা করার পরেও ভালো লভ্যাংশ দেবে না। এতে প্রতাশিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিনিয়োগকারীরা। একই সঙ্গে আগামীতে ব্যাংক খাতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন বিনিয়োগকারীরা। এর নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক পুঁজিবাজারে পড়বে।’


ঢাকা/এনটি/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়