করোনাকালে কেমন আছেন একাডেমির কোচরা
উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব ক্রিকেট একাডেমিতে চলছে খুদে ক্রিকেটারদের ক্লাস || (ফাইল ফটো)
করোনাকালে চাকরি হারিয়েছেন পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজের একাডেমির কোচ। নিরুপায় হয়ে অস্থায়ী পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্যাক্সি ড্রাইভিং। নিজের ব্যক্তিগত গাড়িকেই ব্যবহার করছেন ট্যাক্সি হিসেবে।
পাকিস্তানের ওই কোচের মতোই আর্থিক সংকটে আছে বাংলাদেশের একাধিক একাডেমির কোচ। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতায় ভিন্ন পেশায় যেতে পারছেন না তারা। জীবন রক্ষার তাগিদে একাডেমির কোচরা বিসিবি এবং একাডেমির দিকেই তাকিয়ে।
গত ১৭ মার্চের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে আছে দেশের ক্রিকেটের সকল কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে আছে স্থানীয় একাডেমিগুলোও। জানা গেছে, শুধুমাত্র ঢাকাতেই ব্যক্তি মালিকানায় একাডেমি আছে একশটিরও বেশি। সেই হিসেবে ঢাকায় কোচের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু এই করোনাকালে এসব পেশাদার কোচরা কঠিন সময় পার করছেন। একাডেমিগুলো বন্ধ থাকায় ঠায় বেকার বসে আছেন তারা। ফলে বেতনও পাচ্ছেন না নিয়মিত। অনেক একাডেমির কোচের বেতন ঝুলে আছে মাসের পর মাস।
একাডেমিগুলোর দাবি, খুদে ক্রিকেটারদের থেকে তারা বেতন পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে কোচদের বেতন দেবেন কোথা থেকে? অনেক একাডেমির স্পন্সর আছে। কিন্তু করোনাকালে ব্যবসায়িক মন্দার কারণে একাডেমির পাশে দাঁড়াতে পারছে না স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। ফলে এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার একাডেমির কোচরাই।
ইন্দিরা রোডের ক্লেমন ইনডোর ক্রিকেট একাডেমিতে কোচ আছেন পাঁচজন। মহামারির শুরু থেকেই কোচদের ৫০ শতাংশ বেতন দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। একাডেমির দায়িত্বে থাকা আব্দুল মজিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের এখানে নিয়মিত কোচ আছেন পাঁচজন। প্রত্যেকেই আমরা বেতনের ৫০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করছি। একাডেমি পুনরায় চালু হলে আমরা পুরো বেতন দিতে পারব। আশা করছি ঈদের পর একাডেমি চালু করতে পারব।’
ঢাকা মেট্রোর সহকারী জেলা কোচ রায়হান গাফফার সাইমন বলেন, ‘কোচদের জন্য জীবন যাপন করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে কোচরা কখনোই পড়েনি। ক্রিকেটারদের মতো ক্রিকেটই কোচদের রুটি-রুজি।’
ধানমন্ডি ক্রিকেট একাডেমির খুদে ক্রিকেটাররা || (ফাইল ফটো)
গেন্ডারিয়া ক্রিকেট একাডেমির প্রধান কোচ ইকবাল শিপলু বলেন, ‘একাডেমির কোচ এবং সংশ্লিষ্ট অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না অনেকে। আমাদের দুঃখের কথা কেউ বুঝবেও না।’
আরেক কোচ রাজু আহমেদ রাজ বলেন,‘ক্রিকেট একাডেমির কোচরা একাডেমি থেকে যে পারিশ্রমিক পান সেটা দিয়েই চলেন। করোনার কারণে স্বাভাবিকভাবেই কোচদের আয়ের পথ বন্ধ। একাডেমিগুলোও বেতন পাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিসিবি পাশে এসে দাঁড়ালে কোচরা খুব উপকৃত হবেন।’
ক্রিকেট কোচদের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অনুরোধও করেছেন তারা। শিশুকিশোর ক্রিকেট একাডেমির কোচ মেহের শাহরিয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এবং গেম ডেভেলপম্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান যদি ক্রিকেট একাডেমির কোচদের দিকে নজর দেন তাহলে আমাদের খুব উপকার হয়। কঠিন এ সময়ে কোচরা তাদের পরিবার নিয়ে বেঁচে যাবে। করোনা মহামারির পর কোচরা মাঠে ফিরে অবশ্যই ক্রিকেট উন্নতিতে অবদান রাখতে পারবে।’
তবে ভিন্ন উদাহরণও রয়েছে। কোচদের শুরু থেকেই বেতন দিয়ে আসছে ধানমন্ডি ৪ নম্বরের ধানমন্ডি ক্রিকেট একাডেমি। শুধু কোচ নয়, সহকারী কোচ, অফিস ম্যানেজার ও গ্রাউন্সম্যানদেরও বেতন দিচ্ছে এ একাডেমি।
ধানমন্ডি ক্রিকেট একাডেমির সভাপতি আবু মোহাম্মদ সাবুর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হেডকোচসহ আমাদের এখানে ৬ জন সাপোর্টিং স্টাফ আছে। আমরা শুনেছি, অনেক একাডেমি এই মহামারি করোনার সময় তাদের স্টাফদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না। সেখানে ধানমন্ডি ক্রিকেট একাডেমি ব্যতিক্রম। আমরা নিয়মিত আমাদের কোচদের বেতন দিচ্ছি। আমাদের ক্লাবের সংশ্লিষ্টরা প্রত্যেকেই জানিয়ে দিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে স্টাফরা নিয়মিত বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন।’
ক্লাবের দায়িত্বশীলতায় খুশি কোচ সাদিকুজ্জামান পিন্টু, ‘প্রতিষ্ঠান যখন নিজের কর্মীদের নির্ভার রাখতে পারে তখন স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগে। আমাদের এখানে ৭০ জনের মতো ক্রিকেটার আছে। সবাই প্রায় বয়সভিত্তিক দলের ক্রিকেটার। এখানে ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধাও ভালো।’
বিসিবি এখন পর্যন্ত একাডেমি কোচদের পাশে না দাঁড়ালেও ঢাকা মেট্রোর ৮২ জন কোচকে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ঢাকা/ইয়াসিন/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন