ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আয়ারল্যান্ডের করোনা-যুদ্ধ

শাহরিয়ার পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ২৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আয়ারল্যান্ডের করোনা-যুদ্ধ

করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য আয়ারল্যান্ড সরকার অনেক আগে থেকেই কিছুটা প্রস্তুত ছিল।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পরে আয়ারল্যান্ডে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। ইতালির অবস্থা যখন ধীরে ধীরে খুবই শোচনীয় হতে থাকে ওই সময় থেকে আয়ারল্যান্ড সরকার তার নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে থাকে।

মিডিয়া, সুপার শপ, রাস্তা-ঘাট, বাস, ট্রেন সকল নাগরিকের বাসায় চিঠি পাঠানোসহ এমন কোনো মাধ্যম নেই যা সরকার ব্যবহার করেনি করোনা বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে। পাশাপাশি হাসপাতাল, ইমার্জেন্সি, ডাক্তারদের ট্রেনিং দেয়া সব প্রায় তৈরি ছিল। অবশেষে ২৯শে ফেব্রুয়ারি ইতালিফেরত এক নাগরিকের মাধ্যমে এই দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

মার্চের মাঝামাঝি ইতালি বনাম আয়ারল্যান্ড-এর রাগবি খেলা এবং সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে খুব কাছাকাছি সময় হওয়ার জন্য অনেক ইতালিয়ান এই দেশে এসেছিলো খেলা উপভোগ করতে এবং সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে পালন করতে। হঠাৎ করে আইরিশ সরকার রাগবি খেলা আর সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে উদযাপন বাতিল ঘোষণা করে। অন্যদিকে ইতালি সব ফ্লাইট বাতিল করে লকডাউন ঘোষণা দেয়। মাঝখান দিয়ে ইতালিয়ান অনেক নাগরিক তাদের নিজের দেশেও সময়মতো ফিরতে না পেরে এখানে আটকে যায়। তারপর দিনে দিনে আয়ারল্যান্ডে বাড়তেই থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।

আমার মতে, আইরিশ সরকার অনেক করছে এবং অনেক করার চেষ্টা করছে কীভাবে এই অবস্থা থেকে বের হওয়া যায়। করোনা চিকিৎসার সাথে যারা সরাসরি জড়িত তাদের থাকার জন্য সুব্যবস্থা করেছে সরকার। ১০টি যাত্রীবাহী বিমান (এয়ার লিঙ্গুয়াস) ব্যবহার করে চীন থেকে প্রায় ২০৮ মিলিয়ন ইউরোর পিপিই নিয়ে এসেছে খুব দ্রুততার সঙ্গে। এয়ার লিঙ্গুয়াস বিমান মূলত ইউরোপের বাইরে এই প্রথম কোনো ফ্লাইট এশিয়াতে পাঠিয়েছিল। যাত্রীবাহী বিমান হলেও বিমানে পাইলট ছাড়া কোনো যাত্রী ছিল না। ছিল না কোনো বিমানবালা। বিমানে ছিল শুধু পিপিই। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে গিয়ে আটকে পড়া আইরিশ নাগরিকদের দ্রুততার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনারও ব্যবস্থা করেছে সরকার।

আইরিশ নাগরিক যারা জব করতে পারছে না করোনার জন্য, তাদের সপ্তাহে ৩৫০ ইউরো করে দিচ্ছে, পাশাপাশি যদি কেউ বাসা ভাড়া দিতে না পারে তাদের জন্য রেন্ট সাপ্লিমেন্ট একটা সুযোগ চালু রেখে দিয়েছে। নাগরিকদের সুবিধার জন্য যা যা দরকার সব দুয়ার খোলা রেখেছে তারা। যারা এদেশে পড়তে এসেছে ছাত্রছাত্রী সবাই এই সময় একই রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন ডাক্তার। তিনি সপ্তাহে একদিন হাসপাতালে শিফটে চিকিৎসা সেবা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

করোনার বিস্তার কমানোর জন্য সরকারি নির্দেশনা মেনেই এখন সবাই চলার চেষ্টা করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। দোকানে কেনাকাটা করতে গেলে, একসঙ্গে অনেক লোক প্রবেশ করা যাবে না। লাইন ধরে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে হবে। বাসে কেউ জরুরি প্রয়োজনে কোথাও গেলে একজনের পাশে আরেকজন বসা যাবে না।

যার যার এলাকা থেকে ২ কিলোমিটারের বেশি দূরে যাওয়া যাবে না। বিনা প্রয়োজনে ঘুরলে ২৫০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী অনেক পরিশ্রম করছে মানুষকে কীভাবে ঘরে রাখা যায়। পাশাপাশি যাদের বয়স ৬৫-এর উপর তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস অনলাইন-এ কিনলে ডেলিভারি ফ্রি করে দিয়েছে অনেক গ্রোসারি শপ। বয়স্কদের জন্য সকাল ৯টা-১১টা পর্যন্ত স্পেশাল সার্ভিস দিয়ে থাকে শপগুলো।

আইরিশ সরকার তার দিক থেকে সবরকম সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে।

আয়ারল্যান্ড থেকে


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়