ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কী হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের?

এমএইচ মোবারক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২২, ৩০ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কী হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের?

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)-এর তালিকাভুক্ত ও অনুমোদনপ্রাপ্ত দেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫টি। দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এদিকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে টিউশন ফি না পাওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়েছে মহা বিপাকে। কেননা এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত রয়েছে লাখো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত মাসিক বেতন ছাড়া তাদের আয়ের অন্য কোনো পথ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে তাদের মানবেতর জীবন কাটানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

গত ২৭ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে এক ভিডিও বার্তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, হয়তো তাই ঘটবে। কেননা করোনার ক্রমবর্ধমান গতি দেখে তাই মনে হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোনো প্রভাব ফেলে না। তাই, ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রয়োজন নেই। সুতরাং এগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সঠিক; অন্তত এই পরিস্থিতিতে। কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের কী হবে? কীভাবে তাদের সামনের দিনগুলো অতিবাহিত হবে? এটাও ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করছি।

সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন কিংবা সরকারি কোনো সুবিধা গ্রহণ করে না বা পায় না, এ সব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লাখো শিক্ষক-কর্মচারী যুক্ত। আগামী ছয় মাস তাদের সংসার চালাবে কীভাবে?

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর লাখো শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা বেতন দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। ফলে, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। তাহলে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাবেন কীভাবে?

ধারে নিলাম ধারদেনা করে, খেয়ে না খেয়ে, বাড়ি ভাড়া বকেয়া রেখে না হয় সংসারটা কোনো রকমে চললো। কিন্তু প্রতিষ্ঠান খোলার পর কি তাদের সমস্যা লাঘব হবে? বকেয়া বেতন কি তারা একসাথে পাবেন? যদি না পান, তাহলে তারা বাড়িভাড়া ও পূর্বঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে?

যে ভাবে করোনা পরিস্থতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে তাতে সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হতে আরো হয়তো ২-৪ মাস লেগে যেতে পারে। তারপরেও যদি অক্টোবরের ১ তারিখেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়, তখন কয়জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে ছয় মাসের বেতন দিতে পারবে? সরকারি চাকরিজীবী ও উচ্চবিত্তের সন্তানরা হয়তো বেতন পরিশোধ করতে পারবে। যারা প্রবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, দরিদ্র, হকার, শ্রমিক, ড্রাইভার- তারা? তাদের সন্তানরা কি একসাথে ছয় মাসের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য রাখে?

দীর্ঘ সময় ধরে করোনাভাইরাসের নির্মম থাবার পর বিশ্বের মতো বাংলাদেশের চিত্রও বদলাবে। ঋণে জর্জরিত থাকবে বেশিরভাগ মানুষ। দেশে থাকবে অর্থনৈতিক সংকট। লক্ষ লক্ষ কর্মহীন মানুষ ছুটবে বুক ভরা হতাশা নিয়ে। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস উঠবে মানুষের। দেশজুড়ে থাকবে এক অস্থির পরিস্থিতি। এই অবস্থায় কয়জন শিক্ষার্থী একদিনও ক্লাস না করে ছয় মাসের বেতন দিয়ে দেবে?

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। আর, এই শিক্ষার একমাত্র কারিগর হলেন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এদের বাঁচিয়ে না রাখলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় পড়বে।

উপর্যুক্ত বিষয়গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়