ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লকডাউন শিথিলের বিকল্প ছিলো না

গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
লকডাউন শিথিলের বিকল্প ছিলো না

ছুটিতে এমনই ফাঁকা ছিলো রাজধানীর ব্যস্ততম শাপলা চত্বর

করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে এই সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ঘরে অবস্থান করলে সামনে আরো বেশি বিপদে পড়তে হতে পারে। কারণ দীর্ঘ লকডাউনের প্রভাব দেশের প্রতিটি সেক্টরে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ। যার তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবারে, সমাজে, ব্যক্তিজীবনে।

গত মার্চের ৮ তারিখে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়ে জরুরি নয় এমন ব্যবসা-বাণিজ্য অনলাইনে পরিচালনার নির্দেশ দেয়। এর আগে জানুয়ারির প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং ডিভাইস বসানো হয় যাতে কেউ করোনাভাইরাসের উপসর্গ বহন করছে কিনা বোঝা যায়। প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষের স্ক্রিনিং হয়েছে।

গত তিন মাস ধরে করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে লড়ছে বাংলাদেশ। ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার রোধের জন্য ৩০ মে পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। সবাইকে বলা হয়েছিল ঘরে থাকতে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের সূচনা দিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ থেকে সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ঘোষিত হবার পর, ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। অর্থাৎ রোগী শনাক্তের ২ সপ্তাহ পরই হার্ডলাইনে চলে যায় সরকার। গত ৩ মাসে দেশের আট বিভাগের জেলা প্রশাসক, চিকিৎসক, পুলিশ, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ব্রিফিং ও নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামতও নিয়েছেন তিনি। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সংকটে না পড়ে সেজন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন একাধিকবার।

মহামারির কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সরবরাহ ও চাহিদা দ্বিমুখী সংকটের সম্মুখীন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে যে বৃহৎ অঙ্কের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যার মূল সুবিধা ভোগ করবে উৎপাদন ও সেবা খাত, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষামূলক খাতসমূহ। সংকট প্রলম্বিত হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী এ সময় শুধু কৃষি খাতে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দিয়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য সুচিন্তিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। যাতে কোনো মানুষই মৃত্যুবরণ না করে, আক্রান্ত না হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়ায়, সীমিত আকারে সব কিছু চালু করায় অনেকেই বিরোধিতা করছেন। তারা ভুলে যাচ্ছেন, বহুমুখী সংকটের কথা মাথায় নিয়ে আমাদের এমন পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল আগে-পরে করতেই হতো। আমরা যে স্থানে এসে পৌঁছেছি সেখান থেকে উৎপত্তিস্থলে ফিরে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। যা হয়ে গেছে তাকে ভিত্তি ধরেই এগোতে হবে। যেমন এগোচ্ছে মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, শপিং মল। আমি মনে করি, ধীরে ধীরে শিক্ষাঙ্গনও খুলে দিতে হবে।

সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই কিন্তু ছুটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে জরুরি প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব কিছু বন্ধ ছিল। জনবহুল দেশে এত দীর্ঘ মেয়াদে লকডাউন চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। এ কারণেই ১৫ দিনের জন্য নতুন নিয়মে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের জীবন সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সরকার সেই চেষ্টা করে। সরকারকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা চিন্তা করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সীমিত পরিসরে অফিসসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত মূলত সব বিষয়ে চিন্তা করেই নেওয়া হয়েছে।

করোনার কবল থেকে দেশ কবে মুক্তি পাবে- কেউ বলতে পারে না। তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বসে থাকা যাবে না। কয়েক দিন পর বাজেট পেশ হবে। শুধু ত্রাণের খাবারে মানুষের পেট ভরবে না। তাই লকডাউন কিছুটা শিথিল করা ছাড়া বিকল্প পথ ছিল না। মনে রাখতে হবে লকডাউন সীমিতভাবে তুলে নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই জীবন পরিচালনা করতে হবে।

ইউরোপ, আরব ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে লকডাউন তুলে নেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বছরের এ সময়টা গুরুত্বপূর্ণ।  স্বাস্থ্যবিধির অভ্যাসগুলো প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের নেওয়া পদক্ষেপের তুলনায় বাংলাদেশের সিদ্ধান্তগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রশংসা পেয়েছে। রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আশাকরি, নতুন এই সিদ্ধান্তও সঠিক প্রমাণিত হবে।

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়