ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনাভাইরাস: জোনভিত্তিক লকডাউন নিয়ে কিছু কথা

জাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ৮ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস: জোনভিত্তিক লকডাউন নিয়ে কিছু কথা

প্রায় দুই মাসের সাধারণ ছুটি শেষে ঈদের পর সীমিত আকারে সব খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত ছিল। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন- ফল ভালো হবে না। সম্ভবত তাদের আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হতে চলেছে।

আমরা দেখছি ছুটি প্রত্যাহারের পর থেকেই আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রথম ৭৫ দিনে যত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তার সমপরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে গত ১৪ দিনে। লকডাউন প্রত্যাহার যে আমাদের জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সরকার নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এবারের সিদ্ধান্ত ভিন্ন ধরনের। জোনভিত্তিক এই লকডাউন সাজানো হয়েছে ৩টি ভাগে। গ্রিন জোন, ইয়োলো জোন এবং রেড জোন।

‘সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রেড জোন হবে, মাঝারিটা হবে ইয়েলো এবং যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণ নেই বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংক্রমণ হয়েছে সেসব এলাকা থাকবে গ্রিন জোনে।’ গ্রিন জোনকে নিরাপদ হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম না করা, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার মতো নিয়ম মেনে চলতে হবে মানুষকে।

অন্যদিকে যেসব এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে কড়াকড়িভাবে লকডাউন কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে। রেড জোনে যেসব কোভিড-১৯ রোগী থাকবেন এবং যারা কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, তাদের বাসা থেক বের হতে দেওয়া হবে না। আক্রান্ত রোগী এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের খাবার ও জরুরি ওষুধ তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আক্রান্তদের বাইরে এলাকাবাসী যারা থাকবেন তারা ঘর থেকে বের হয়ে জরুরি প্রয়োজনে দোকানে যেতে পারবেন, কিন্তু পালাক্রমে। একই সময়ে একসঙ্গে বেশি মানুষ বের হতে পারবেন না। আর তাদের কেউ এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। তবে সেসব এলাকায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গ্যাস, বিদ্যুৎ বা গণমাধ্যম সেবার সঙ্গে জড়িত কর্মীদের বিশেষ অনুমতিপত্র থাকবে, এই অনুমতিপত্র দেখিয়ে তারা আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

রেড জোনের এলাকাগুলোতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত অফিস ছাড়া অন্য কোনো ধরনের অফিস খোলা থাকবে না। রেড জোনে থাকা এলাকাগুলোতে যারা কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারবেন না, তাদের জন্য কমিউনিটি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করা হবে। প্রত্যেকটি রেড জোনের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে একটি হাসপাতাল। এলাকা লকডাউন করা হলেও এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়ার বড় রাস্তা লকডাউনের আওতায় থাকবে না বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। যেটা আসলে কড়াকড়ি লকডাউন হিসেবে বিবেচনা করার মতো নয়।

কোভিড-১৯ রোগী এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের জন্য রেড জোন এবং ইয়েলো জোনের নিয়ম একই। তবে ইয়েলো জোনের আক্রান্ত না হওয়া বাসিন্দারা এলাকা থেকে বের হতে পারবেন- পার্থক্য বলতে এটুকুই। এ ছাড়া ইয়েলো জোনে হাসপাতাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সেবার অফিস ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু অফিস খুলে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু কোন অফিসগুলো খুলে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এই এলাকাগুলোতে একসঙ্গে অনেক মানুষ যেন প্রবেশ করতে বা বের হতে না পারেন, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। গ্রিন জোনে রেড জোন এবং ইয়েলে জোনের মতো কড়াকড়ি নেই, তবে বেসিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয়। ৭ দিন করে বাড়াতে বাড়াতে এই লকডাউন চলে প্রায় ২ মাস সময় ধরে। এসময় করোনার বিস্তার ঠেকানো না গেলেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিলো। অথচ এই সময় আমরা দেশের কোথাও কড়াকড়ি লকডাউন দেখিনি।

কড়াকড়ি লকডাউন করেই হংকং, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। আমরা পারিনি কারণ আমরা প্রপার ওয়েতে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারিনি। দেশের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমানবিকতাই মানবিকতা। আমরা সেটা বুঝতে চেষ্টা করিনি। চীন, ইতালিতে যখন করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি তখন আমরা সেই সব দেশ থেকে প্রবাসীদের ফিরিয়ে এনেছি। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। এজন্য একটা বড় পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিলো, সেই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়েছে।

অথচ শুরুতেই বিমানবন্দর শাটডাউন করে সফল হয়েছে ভিয়েতনামের মতো বেশ কিছু দেশ। আমরা পারিনি কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। তাদের চাপে অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। গার্মেন্টস কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে যোগদান, বা বাড়ি চলে যাওয়ার বিষয়টিও এখানে যুক্ত করতে পারেন। 

চীনের উহানে করোনার উৎপত্তি হলেও পাশের শহর বেইজিং ছিলো অনেকটাই নিরাপদ। কারণ কড়াকড়ি লকডাউন।  আমরা যতদিন কড়াকড়ি লকডাউন পালন করতে না পারব আমাদের করোনা যুদ্ধে জয়লাভ ততই দীর্ঘায়িত হবে। তাই সরকারের উচিত হবে ১৪ দিনের একটা কড়াকড়ি লকডাউনের ব্যবস্থা করা। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়