ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রাণী হত্যা বন্ধে চাই আইনের কঠোর প্রয়োগ

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২১, ১৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
প্রাণী হত্যা বন্ধে চাই আইনের কঠোর প্রয়োগ

একের পর এক প্রাণী হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই অবাধে বন্যপ্রাণী হত্যা করা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও এ প্রসঙ্গে সরব। আলোচিত প্রাণী হত্যার ঘটনায় মামলাও হচ্ছে। কিন্তু তাতে প্রতিকার মিলছে কি?

২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর, বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে একটি বাচ্চা বন্য হাতির মরদেহ পাওয়া যায়। একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন মৎস প্রকল্পের পুকুরে বাচ্চা হাতির মরদেহ ভেসে ওঠে। আনুমানিক প্রায় ৪ বছর বয়সি এই বন্যহাতিটি মানুষের পাতা ফাঁদে আটকে মারা যায় বলে অভিযোগ ওঠে। সে সময় থানায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। এছাড়াও সে বছর ১৯ নভেম্বর কুমারীচাক কাটারিতে এবং ৩০ নভেম্বর ইসকাটাকার ঝিরিতে আরো দুটি বন্যহাতির মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ জন্য পৃথক মামলাও করা হয়। তবে এর কোনোটিরও সুরাহা হয়নি।

১৯ নভেম্বর ২০১৯, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় লোকালয়ে চলে আসা ও মানুষের উপর আক্রমণের অপরাধে একটি বানরকে ‘জনতার আদালত’ বসিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এই প্রাণী হত্যার অবৈধ আদালতের বিচার হয়নি কোনো বৈধ আদালতে। যে কারণেই হয়তো এখনও এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। গত ৩১ মার্চ মানুষের হাতে প্রাণ হারায় আরেকটি বানর। শ্রীমঙ্গলের লাইয়ারকুল গ্রামের কুমিল্লা পাড়ায় খাবারের খোঁজে এসেছিলো বানরটি। স্থানীয় কয়েকজন সেই বানরটির গলায় লোহার তার পেঁচিয়ে হত্যা করে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিও সূত্র ধরে কুদ্দুছ, জামাল, সাহেব আলী নামে তিনজন স্থানীয় চিহ্নিত হয়। ঘটনার পরপরই তাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ হত্যার বিচার আজও হয়নি।

এমন উদাহরণ আরো দেওয়া যাবে। নাটোরের বাজিতপুর গ্রামের বটতলা এলাকায় পাশাপাশি কয়েকটি শিমুলগাছে বসতি নিয়েছিল বেশ কিছু শামুকখোল পাখি। পাখিগুলো দেখেই লোভ হয় স্থানীয়দের।  তবে গ্রামের তরুণদের বাধায় তাদের চেষ্টা সফল হচ্ছিল না। ২০ মে ঘটে যাওয়া ‘আম্পান’ ঝড়ে অসহায় হয়ে পরে সেই অতিথি পাখিগুলো। ঝড়ে তাদের ঘর ভেঙে যায়। বাতাসের তীব্র বেগে মাটিতে আছড়ে পরে অন্তত ২০০ পাখি। সেই সুযোগে পাখিগুলোকে ধরে রান্না করে খেয়ে ফেলে গ্রামবাসী। এ ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। হাতিকে বিস্ফোরক ভর্তি আনারস খাইয়ে হত্যা করার ঘটনা তো এই সেদিনের।

প্রাণী হত্যার এমন শত শত উদাহরণ ব্যথিত করে তুলেছে বোধসম্পন্ন মানবিক মানুষকে। প্রতিটি ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ, তবুও আবার ঘটছে প্রাণী হত্যার ঘটনা। এত কিছুর মাঝেও আশার আলো সেখানেই, প্রাণী হত্যার প্রতিবাদে এখন দেশের জনগণ সোচ্চার। বরগুনায় মাছরাঙা হত্যার প্রতিবাদে যুবকের দায়ের করা মামলাটিই যেন জানান দিলো, এদেশে প্রকৃতিপ্রেমীরা এখনো বেঁচে আছে। তাঁদের প্রতিবাদ প্রমাণ করে, দেশের জনগণ আজ সচেষ্ট প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতন মানুষের জোরালো অবস্থান গণমাধ্যমকে সহায়তা করে যাচ্ছে। প্রাণী হত্যাকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো অপরাধীদের বিবেকের মঞ্চে দাঁড় করাচ্ছে। সহায়তা করছে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবুও উদয় হয় কিছু প্রশ্নের। সচেতন জনগণের প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রাণী হত্যার বিষয়গুলো আইনি নজরে আসার পরেও তা কতটুকু সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছে? মামলা কিছু হচ্ছে। তবে বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে ক’টা?

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ ক এ রাষ্ট্রকৃত জীববৈচিত্র, বন ও বন্যপ্রাণী, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’’ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ (২০১২ সনের ৩০ নং আইন) অনুযায়ী অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী হত্যার বিচার ও শাস্তিসমূহ লিপিবদ্ধর য়েছে। তবুও প্রাণী হত্যার দৃশ্য দেখতে হচ্ছে আমাদের।

আমাদের দেশে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় আইন আছে ঠিকই। তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দেখা যায় না। আর আইনের প্রয়োগ নেই বলেই, তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। আসামি ধরা পরে না। অপরাধীদের জেলে যেতে হয় না। জরিমানা গুনতে হয় না।

এ দেশের সংবিধান প্রাণীদের নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে, তবু কেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত? এর উত্তর আমার কাছে একটাই মনে হয়- আইনের কঠোর প্রয়োগ। জোরালো আইন প্রতিষ্ঠাই পারে প্রাণী হত্যা রুখতে।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়