ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এ বছর ডেঙ্গু রুখতেই হবে

ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১৮ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
এ বছর ডেঙ্গু রুখতেই হবে

বিশ্বব্যাপী এখন কভিড-১৯ সংকট চলছে। মানুষ করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। চলমান কভিড-১৯ সংকটের মধ্যেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে বিশেষ করে ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোতে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে যদি এ বছর এডিস মশা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে গত বছরের মতো এ বছরও ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। গত বছর বাংলাদেশে শুধ সরকারি হিসাবেই এই রোগে ১৬৪ জনের প্রাণহানী ঘটেছিল। 

গত বছর শুধু ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব ছিল, এ বছর কভিড-১৯ এর মহামারি চলমান। যদি দুটির প্রার্দুভাব একসাথে ঘটে তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হবে। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ যেমন- ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে এখন করোনা এবং ডেঙ্গুর পাশাপাশি প্রার্দুভাব চলছে। তাছাড়া বিশে^র অনেক ডেঙ্গুপ্রবণ দেশ যেমন- দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, কলাম্বিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বর্তমানে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর সংক্রমণও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। এতে আমাদের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরবে।

করোনা ছড়াচ্ছে মানুষের মাধ্যমে, মশা ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। ফলে একই ব্যক্তি একইসাথে করোনা ও ডেঙ্গু উভয় ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেশ কিছু দেশে যেমন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভারতে এই ধরনের দ্বৈত সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। আমাদের দেশে এরকম দ্বৈত সংক্রমণের ২-৩ টা কেস বা ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটেছে। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে যে, করোনা ও ডেঙ্গু উভয় ভাইরাসের দ্বৈত সংক্রমণে বা সহ-সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের বিভ্রান্তিকর উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। রোগী কভিড-১৯ না ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নির্নয় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পরছে। সিঙ্গাপুরে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ের উপর গবেষণা করেছেন। তারা কভিড-১৯ রোগীর দেহে ডেঙ্গুর পজিটিভ ফলাফল পেয়ে আতঙ্কিত হয়েছেন। যেখানে একজন কভিড-১৯ রোগীকে প্রথমে ডেঙ্গু রোগী বিবেচনা করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছিল। এতে করে রোগীর করোনা টেস্ট বিলম্বিত হয়েছিল এবং ততক্ষণে রোগীর দেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। করোনা ও ডেঙ্গু দুই ধরনের ভাইরাস হলেও প্রাথমিক অবস্থায় এদের কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ একই ধরনের থাকে। রোগ বাড়লে এদের লক্ষণের প্রার্থক্য বোঝা যায়। আবার প্রতিবছরই ডেঙ্গুর লক্ষণ কিছুটা বদলে যাচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষসহ পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীদেরও লক্ষণ দেখে কভিড-১৯ এবং ডেঙ্গুর মধ্যে পার্থক্য করা জটিল হয়ে পড়েছে। তাই এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে অধিকতর সর্তকতা অবলম্বন করতেহবে। 

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি ডেঙ্গুপ্রবণ দেশ। বিভিন্ন কারণে যেমন জলবায়ু পরিবর্তন (অতিবৃষ্টি, অতিখড়া), ভৌগলিক অবস্থান, ডেঙ্গুর কার্যকরী টিকার অভাব, মশার দমন ব্যবস্থার ত্রুটি (আধুনিকনয়), ভেজাল কীটনাশকের ব্যবহার, মশাদের কীটনাশক প্রতিরোধী হওয়ায় এডিস মশা দমন তথা ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জের। তাই এডিস মশার সফল দমনে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। করোনাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। এমনিতেই আমাদের হাসপাতালগুলো এখন করোনারোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে আবার এর সঙ্গে যদি ডেঙ্গু রোগী বা ডেঙ্গু ও করোনায় একসঙ্গে আক্রান্ত রোগী যোগ হয় তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। জনমনে বাড়বে আতঙ্ক। সুতরাং আমাদেরকে এ বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতেই হবে। 

আমরা সচরাচর মশা নিয়ন্ত্রনের চেয়ে ডেঙ্গু চিকিৎসায় বেশী মনোযোগ দিয়ে থাকি। মশা নিয়ন্ত্রণ ঠিকমতো না করে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব হলে নড়েচড়ে বসি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ডেঙ্গুর চেয়ে ভয়ানক মরণঘাতী করোনা আমাদের সামলাতে হচ্ছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের চেয়ে মশার শক্ত প্রতিরোধ করাটাই শ্রেয় হবে। মশা নিয়ন্ত্রণ ঠিকমতো করতে পারলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমবে এবং হাসপাতালেও চাপ কমবে। তাই আমাদেরকে এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মশা দমনে বেশি মনোযোগী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কীটতত্ত্ব), পবিপ্রবি, বাংলাদেশ

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়