মদ্রিচ থেকে উইলিয়ামসন, হৃদয় জেতেন তারা
লন্ডন থেকে ইয়াসিন হাসান : লুজনিকি থেকে লর্ডস। বিধাতা তার সেরা খেলোয়াড়কে জিততে দেন না শ্রেষ্ঠত্বদের মুকুট। সেরা খেলোয়াড় জেতেন মিলিয়ন অব হার্টস।
রাশিয়ার লুজনিকি স্টেডিয়ামে পল পগবা ও কালিয়ান এমবাপ্পে যখন ক্রোয়েশিয়ার জালে পরপর দুই গোল দিয়ে দেন তখন লুকা মদ্রিচও বুঝে যান, আর হবে না! তবু চেষ্টা করেন মানজুকিচ। গোল করেন। তাতেও ব্যবধান ৪-২। ফ্রান্স জেতে বিশ্বকাপ। ক্রোয়োশিয়া প্রথমবারের মতো ফাইনালের মঞ্চে উঠে রানার্সআপ। গ্রিজমান, পগবারা উৎসব করেন। কোনো গোল না করেও জিরুদ বিশ্বকাপ জয়ী দলে। অথচ পুরো টুর্নামেন্টে ধ্রুপদী জাদুতে বুদ করে রাখা মদ্রিচ থেকে যান আড়ালে।
ক্যামেরার লেন্স খুঁজে পায় তার বিষন্ন, বিষাদময় মুখ। সান্তনা পাওয়ার ভাষা নেই, উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। একটা বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কষ্ট টের পায় ক্রোয়েশিয়ার সবাই। তবুও জাগরেবে ফিরে তারা পান গার্ড অব অনার। পথে পথে ক্রোয়াটদের ভালোবাসায় সিক্ত হন মদ্রিচ।
এক বছর আগের ফুটবল স্টেডিয়াম ফিরে আসে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। লুজনিকির জায়গায় আসে লর্ডস। মদ্রিচের জায়গায় উইলিয়ামসন। ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো রোববার জিতে নেয় বিশ্বকাপের মুকুট। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের খেতাব পাওয়া উইলিয়ামসন অকল্যান্ড ফেরেন ব্যক্তিগত মুকুট নিয়ে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেরা ফাইনালের পর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জেতে বাউন্ডারি হিসেবে। কি নিষ্ঠুর ক্রিকেট! ক্রিকেট তীর্থে যা হয়েছে তা কল্পনা করেননি অনেকেই। ওই যে গাপটিলের থ্রোতে স্টোকসের ব্যাট ছুঁয়ে ওভারথ্রোতে চার রান হবে তা কেউ ভেবেছিল? কিংবা ১০০ ওভারের নাটকীয় টাইয়ের পর সুপার ওভারও টাই! এমন অমীমাংসিত ফাইনালের শিরোপা নির্ধারণ করে দেয় বাউন্ডারি!
নিউজিল্যান্ড ম্যাচ হারে, কেন উইলিয়ামসনও এবার আর পারেননা। দলকে ফাইনাল পর্যন্ত তুলে আনতে সবথেকে বেশি অবদান তার। কিন্তু শিরোপা তার কপালে লিখা থাকে না। ৫৭৮ রান নিয়ে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। তবুও নিজের সাফল্য নিয়ে খুশি থাকতে পারেন না কিউই অধিনায়ক,‘ব্যক্তিগত পরফরম্যান্স আসলে বিশেষ কিছু নয়, দলের হয়ে কাজটা করতে গিয়ে আপনি আপনার কাজটা করে ফেলছেন। সব সময়ই পরিকল্পনা থাকে যে দলের হয়ে অবদান রাখা। সেই কাজটাই আমি করেছি। ’
তবে পুরো টুর্নামেন্টে যেভাবে দল খেলেছে তাতে ছেলেদের গর্ববোধ করা উচিত বলে মনে করছেন উইলিয়ামসন,‘আপনি কতো ব্যবধানে হারলেন কিংবা জিতলেন সেটা বড় কোনো বিষয় নয়। আমাদের ছেলেদের সবার নিজেদের সাফল্যে গর্বিত হওয়া উচিত। পুরো টুর্নামেন্টে আমরা যেভাবে খেলেছি এবং ফাইনালে এসেছি, প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছি তাতে সন্তুষ্ট থাকা উচিত।’
ফাইনালের মঞ্চে শিরোপা নির্ধারণ করে দেয় ওই ওভারথ্রো। চাইলেই অনফিল্ডে সেই রান নিয়ে বিবাদে জড়াতে পারতেন। কিন্তু স্পোর্টসম্যানশিপ দেখান ওই মুহূর্তে। তাইতো সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রশ্ন করতে গিয়ে ইংরেজ সাংবাদিক দাঁড়িয়ে যান। বলেন, ‘আপনাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করছি…আপনার কি মনে হয় ক্রিকেট মাঠে প্রত্যেকের আপনার মতো জেন্টালম্যান হওয়া উচিত?’
শচীন টেন্ডুলকারের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করা উইলিয়ামসনের উত্তর মুগ্ধ করে সবাইকে, ‘দেখুন প্রত্যেকের নিজস্ব মনোভাব দেখানোর অধিকার আছে। এটাই বিশ্বের সবথেকে ভালো দিক। আবার প্রত্যেকেই একে অন্যের থেকে ভিন্ন। আপনি আমাকে যে প্রশ্নটি করেছেন সেই উত্তর খুব কঠিন। হয়তো একটু আগে যা বলেছি সেটা আমার সেরা উত্তর। একটাই পরামর্শ দিতে পারি, আপনি নিজের মতো হন। আপনি যা করছেন তা উপভোগ করার চেষ্টা করুন।’
কথা শেষ করতে পারেন না উইলিয়ামসন...তার আগেই উপস্থিত সাংবাদিকরা উঠে দাঁড়িয়ে করতালিতে সম্মান জানান উইলিয়ামসনকে।
রাইজিংবিডি/লন্ডন/১৫ জুলাই ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন