ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ছন্দ হারিয়ে ম্যাচ হারল বাংলাদেশ

রাজকোট থেকে ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০২, ৭ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছন্দ হারিয়ে ম্যাচ হারল বাংলাদেশ

ছবি- মিল্টন আহমেদ

মুস্তাফিজের বাউন্সারে পুল করতে চেয়েছিলেন আইয়ার। টাইমিংয়ে গড়বড়। তবুও এক রান। বল ব্যাটের কানায় লেগে যায় ডিপ থার্ডম্যান অঞ্চলে।

মুহূর্তেই রাতের আকাশে আলোকচ্ছটা। সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ছুটল আতঁশবাজির ফোয়ারা। রাতের আকাশ ঝলমলে। চিকচিক করছিল স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচা। অথচ এত আলো থাকতেও অন্ধকারে ডুবে রইল বাংলাদেশ। দিল্লিতে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পাওয়া ভারত এবার ৮ উইকেটে হারাল বাংলাদেশকে। ফেরাল টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা।  আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ১৫৩ রান তুলে। জবাবে ভারত ম্যাচ জিতে নেয় ২৬ বল আগে, ৮ উইকেট হাতে রেখে।

‘মাহা’ ঝড় আসার কথা ছিল। ওই ঝড়ে রাজকোট ভেসে যাবে এমনটাই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ভারতের সপ্তম স্বচ্ছতম শহরে মিলল রোহিত ঝড়। তাতে রাজকোটের কোনো ক্ষতি হয়নি।  রোহিত ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে ব-দ্বীপের দেশ বাংলাদেশ। ২৬ বলে ফিফটি, ৪৩ বলে ৮৫ রান- বাংলাদেশের কোনো বোলারের তাকে থামানোর উত্তর জানা ছিল না। তাইতো রাজকোটে রাজার মতো শাসন করেছে টিম ইন্ডিয়া।  

ছন্দ হারিয়ে হারিয়ে বাংলাদেশের ম্যাচ হারা তো নতুন কিছু নয়। মনে নেই ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের কথা। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ১২০ রানের ওপেনিং জুটি। ওখান থেকে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশ অলআউট ২২২ রানে। এরপর আর ম্যাচের বাকি থাকে কি? তবুও বোলাররা শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছিল। এবার সেটাও হলো না রোহিত ঝড়ের কৃতিত্বে।  

ভারতের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৬০ রান তুলে ফেলেন নাঈম শেখ ও লিটন কুমার দাশ।  এ জুটি ভাঙতেই সব ওলটপালট।  ১৭ ও ২৬ রানে দুবার জীবন পাওয়ার পরও লিটন নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন। স্ট্যাম্পড হয়ে লিটন প্রথমে বেঁচে যান।  উইকেটের সামনে থেকে বল ধরায় নো বলে জীবন পান লিটন। এরপর ২৬ রানে ক্যাচ তুলে ভারতের পাঁচ ফিল্ডারকে এক জায়গায় নিয়ে আসেন। কিন্তু কেউই বল তালুবন্দি করতে পারেননি। ২৯ রানে বল না দেখেই দৌড় শুরু করেন লিটন। এবার সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভেঙে পাপমোচন করেন পান্ত।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর সৌম্য ও নাঈম ২৪ রানের জুটি বেঁধেছিলেন।  দ্বিতীয় ওভারে টানা তিন বাউন্ডারি মেরে নাঈম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কবজির জোর তারও কম নেই। কিন্তু উইকেটে থিতু হওয়ার পর ইনিংস বড় করতে পারেন না তরুণ নাঈম। সুন্দরকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৩৬ রানে।  এরপর মুশফিক ও সৌম্যর বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে বাংলাদেশকে বড়শড় ধাক্কা দেন চাহাল।

টার্ণের বিপরীতে সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন আগের ম্যাচের নায়ক। দুবার ডাউন দ্য উইকেটে এসে বেঁচে গিয়েও ‘শিক্ষা’ হয়নি সৌম্যর। তৃতীয়বার সৃষ্টিকর্তা আর তার পাশে দাঁড়ায়নি। ২০ বলে ৩০ রান করে চাহালের বলে স্ট্যাম্পড হন সৌম্য। ৮৩ থেকে ১০৩ রানে যেতে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট।

ইনিংসের মধ্যভাগে রানের চাকা প্রায় থেমেই গিয়েছিল। আর শেষদিকে রান তোলা যাচ্ছিল না কোনোভাবেই।  শেষ তিন ওভারে যোগ হয়েছে মাত্র ১৭ রান। ভাবা যায় এ সময়ে বাউন্ডারি এসেছে মাত্র ১টি।  আফিফ, মোসাদ্দেক ও আমিনুল ডেথ ওভারে ছিলেন নিস্প্রভ। রান তো তুলতেও পারেননি বরং বল নষ্ট করেছেন প্রত্যেকে। মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা চালিয়েও ২১ বলে ৩০ রানের বেশি করতে পারেননি।

প্রথম ৫০ রান পেতে বাংলাদেশের লেগেছিল মাত্র ৩৫ বল।  ৫০ থেকে ১০০ যেতে ৪১ বল। আর ১০০ থেকে ১৫০ গিয়েছে ৪৩ বলে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে, ব্যাটিংয়ের দারুণ মোমেনটাম নষ্ট করে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে বাংলাদেশ ডুবে যায় অথৈ সাগরে। শুরুতে না পারলেও মাঝের ও শেষের ওভারে বাংলাদেশকে চেপে ধরে ম্যাচ নিজেদের বাগে নিয়ে আসে টিম ইন্ডিয়া।

লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের দুই ওপেনারকে একটু ছটফট করতে দেখা গেল না। বরং শুরুতে একটু সময় নিয়ে খেলে পরবর্তীতে হাত খুলে আক্রমণ চালান তারা। তবে শেখর ধাওয়ানকে দর্শক বানিয়ে রেখেছিলেন রোহিত।

মুস্তাফিজ, শফিউল, আল-আমিনদের কড়া শাসনের পর স্পিনারদের এলোমেলো করে দেন রোহিত।  রোহিতের কাছে মুস্তাফিজ যেন পাড়ার বোলার। প্রথম ওভারে মুস্তাফিজ ব্যয় করেন ১১ রান।  পরের ওভারে দেন ১৫।  আল-আমিন নিজের প্রথম ওভারে ৩ রান দিলেও পরের ওভারে দেন ১১। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে শফিউল বিলিয়ে আসেন ১৫ রান।

৬ ওভারে ভারতের রান বিনা উইকেটে ৬৩।  অষ্টম ওভারে রোহিত আফিফকে ছক্কা মেরে ক্রিজে আমন্ত্রণ জানান।  ওই ছক্কায় ২৩ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন রোহিত। দশম ওভারে মোসাদ্দেকের প্রথম তিন বলে তিন ছক্কা ভারতের অধিনায়কের।  ডানহাতি অফস্পিনার নিজের প্রথম ওভারে দিয়ে আসেন ২১।  

রোহিতের তান্ডবে একটু একটু করে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে শুরু করে বাংলাদেশ। তবুও আমিনুলের স্পিন ঘূর্ণিতে কিছুটা স্বস্তির পরশ পায়।  শেখর ধাওয়ানকে বোল্ড করেন এ লেগ স্পিনার। আর রোহিতকে বঞ্চিত করেন সেঞ্চুরি থেকে।  ৬ চার ও ৬ ছক্কায় ৪৩ বলে ৮৫ রান করে রোহিত সাজঘরে ফেরেন মিথুনের হাতে ক্যাচ দিয়ে।  ভারতের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছিলেন রোহিত। ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু সেঞ্চুরিরটা হলে ষোলোকলা পূর্ণ হতো ডানহাতি ওপেনারের।  

লিটন নাঈমের সাজানো বাগানে রোহিত রাঙিয়েছেন নিজের মতো করেছে। সৌম্য সেই বাগানে পরির্চযা করলেও ফুল ফোটাতে পারেননি।  বাকিরা নিষ্প্রভ ছিলেন গোটা ম্যাচে। এমন ম্যাচে রোহিত ঝড় বাংলাদেশকে হারাতে যথেষ্ট।  

দিল্লি, রাজকোটের লড়াইয়ের পর সিরিজের ফয়সালা হবে নাগপুরে।  শেষ বাজিতে কারা জিতে সেটাই দেখার।


রাজকোট/ইয়াসিন/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়