ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আক্ষেপের রাতে নাঈমের প্রেরণার ৮১

ইন্দোর থেকে ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৬, ১১ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আক্ষেপের রাতে নাঈমের প্রেরণার ৮১

ছবি: মিলটন আহমেদ

‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া... ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া…।’ নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ২৫ হাজার দর্শকের গগণবিদারী চিৎকার। ওই চিৎকারে ভয় পান না নাঈম শেখ। যুজবেন্দ্র চাহালকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারেন ছক্কা। স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নীরবতা।

রোববার নাঈম যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ বিদর্ভ ঘুমিয়ে ছিল। শিবম দুবের বলে নাঈম ফিরতেই চেনা রূপে ফিরে আসে গ্যালারি। আবার ২৫ হাজার দর্শক এক গলায় গাইতে শুরু করে- ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া… ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া…।’

ভারতের মাটিতে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৭৫ রান। শুরুতে লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে হারানোর পরও নাঈমের আত্মবিশ্বাস কমে না। ২২ গজকে স্বর্গ বানাবেন, এমন পণ নিয়েই যে মাঠে নেমেছিলেন তিনি।

৪৮ বলে ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নাঈম বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের লড়াইয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু দুবের ফুল লেংথ বলে শেষ নাঈমের ধ্রুপদী ইনিংস। ‘ওই বলটা ওদের ইনিংসের সবচেয়ে ভালো বল’- নিজের আউট নিয়ে মোহাম্মদ নাঈম শেখের বিশ্লেষণ এমনই।

নাগপুরে সব আলো কেড়ে নিতে পারতেন তরুণ নাঈম। এই সিরিজ দিয়েই তার অভিষেক। প্রথম ম্যাচে ২৬ রান করে রেখেছিলেন অবদান। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৬ করে বড় কিছুর আশা দেখিয়েছিলেন। শেষটায় বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত বলা হচ্ছে।

৪৮ বলে ৮১ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে ‘বিগ ফাইনালে’ একাই বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। ১০ চার ও ২ ছক্কায় ভারতের বোলিং এলোমেলো করে দেন। কিন্তু বাংলাদেশ পারেনি শেষটা রাঙাতে। সেটা মোটেও নাঈমের ভুলে নয়!

দলের পরাজয়ের দিনে সেঞ্চুরিবঞ্চিত নাঈম। তাতে আক্ষেপ নেই মোটেও। আক্ষেপ সিরিজ জিততে না পারার, ‘আক্ষেপ অনেক বেশি। সিরিজ জিততে পারলে ভালো লাগত। জিততে পারিনি এজন্য খারাপ লাগছে। সেঞ্চুরির জন্য অবশ্যই খেলিনি। দলকে জেতানোর জন্য খেলেছি। তাই একটু খারাপ লাগছে।’

তৃতীয় উইকেটে ৬১ বলে ৯৮ রানের জুটি মোহাম্মদ মিথুন ও নাঈমের। প্রতিটি ওভারে তাদের নিখুঁত ও পরিকল্পিত ব্যাটিং। জুটি নিয়ে নাঈমের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের দুজনের কথা হচ্ছিল…শেষ করলে আমাদেরকেই শেষ করতে হবে। পিছনের দিকে যেন না যাই। তবে আরেকটা জুটি হলে আমরা জিততে পারতাম।’

প্রায় ৮১ মিনিট উইকেটে ছিলেন নাঈম। এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি নিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলছেন। পেসার, স্পিনার কাউকেই ছাড় দেননি। সোজা ব্যাটে শট খেলেছেন। ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলেছেন বুক ভরা সাহস নিয়ে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে। নিজের ব্যাটিং নিয়ে নাঈম বলেছেন, ‘আমাদের টার্গেট যেরকম ছিল সেরকম ব্যাটিং করেছি। আক্রমণাত্মক খেলেছি তেমন নয়। যেভাবে খেলার দরকার ছিল সেভাবে খেলেছি। ’

দল হেরেছে। বাংলাদেশ খুইয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তবুও নিজের অভিষেক সিরিজ থেকে নাঈম ফিরছেন বিশেষ কিছু নিয়ে, ‘অভিষেক মনে রাখার মতো। যেহেতু প্রথম ম্যাচ জিতেছি খুব ভালো লেগেছে। শেষটায় আমার রান অবশ্যই আমাকে আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।’

ভবিষ্যত নিয়ে এখনই ভাবতে চান না তিনি। সামনেই দেশের মাটিতে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ। নাঈম মনোযোগী হতে চান সেখানেই।

বাঁহাতি ব্যাটসম্যান যখন নাগপুরের সবুজ গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে সাজঘরে ফিরছিলেন, তখন স্টেডিয়ামের প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ভারতীয় সমর্থকরা ক্রিকেট বোঝে। বোঝে ভালো ইনিংসের মর্ম। তাইতো প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেনি। যেমনটা করেননি স্টার স্পোর্টসে হিন্দিতে ধারাভাষ্য দেওয়া ভারতের দুই সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং ও ইরফান পাঠান। ম্যাচ শেষে দুজনই নাঈমকে বলেছেন, ‘তুমি থাকলে ম্যাচটা জিতত বাংলাদেশ।’

আক্ষেপ নিয়ে সফর শেষ হলেও নাঈম ভারত থেকে প্রেরণা পেয়েছেন সামনের লম্বা সময়ের জন্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, নাগপুরের ইনিংস তাকে টেনে নেবে বহুদূর। নাঈম পাড়ি দেবেন রানের হাজার মাইল।


ইন্দোর/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়