ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পেসারদের তোপে দিশেহারা বাংলাদেশ

ইন্দোর থেকে ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পেসারদের তোপে দিশেহারা বাংলাদেশ

ছবি : মিলটন আহমেদ

‘তপ্ত দুপুরে গরম টিনের চালে বিড়ালের লাফালাফি।’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আউটের ধরনে এমন উপমা কেউ ব্যবহার করলে ভুল হবে কি?

ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলার আগে জাতীয় দলের সবাই খেলেছেন ওয়ালটন জাতীয় ক্রিকেট লিগে। সেটাই ছিল প্রস্তুতির মঞ্চ। দুই রাউন্ডের পারফরম্যান্সে মাহমুদউল্লাহর প্রস্তুতি ছিল সবথেকে বেশি। দুই হাফ সেঞ্চুরির পর তার ব্যাট থেকে আসে তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার। অথচ ইন্দোরে আজ যখন তাকে সবথেকে বেশি প্রয়োজন ছিল তখন হাল ছাড়লেন বাজে শটে।

শুধু মাহমুদউল্লাহ কেন, গোটা দলের চিত্রটা তো এমনই। ভারতের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের ১১তম টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। ইন্দোরে নতুন ভূমিকায় আজই তার পথ চলা শুরু। কিন্তু অভিষিক্ত অধিনায়কের নতুন অধ্যায়ের দিনে সতীর্থরা তাকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারেননি। পেসারদের দাপটে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করতে পারল মাত্র ১৫০। জবাবে ভালোভাবেই দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা। ১ উইকেটে তারা তুলেছে ৮৬ রান। দিনের শেষটায় বাংলাদেশের সাফল্য খাতায় আরেকটি উইকেট যোগ হতে পারত। কিন্তু ইমরুল তা হতে দিলেন কই! রাহীর বলে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ক্যাচ ছাড়েন স্লিপে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুমিনুল সাহস দেখিয়েছিলেন। ভারতের তিন পেসার ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ সামিকে থামানোর উত্তর জানা ছিল না ডিন এলগার, ডি কক ও ফাফ ডু প্লেসিদের দক্ষিণ আফ্রিকার। কারণ, তিন টেস্টে প্রোটিয়াদের ৬০ উইকেটের ২৬টি নেন পেসাররা। সেখানে অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামার সিদ্ধান্তের বড় কারণ, চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করতে চায় না বাংলাদেশ। ইন্দোরের আগের অভিজ্ঞতা বলছে শেষ দুদিনে স্পিনাররা নাচাবেন ব্যাটসম্যানদের। সেখানে টস জিতে এগিয়ে কেন চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করবে বাংলাদেশ? 

ব্যাটিংয়ের শুরুতেই ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদবের আগ্নেয়গিরি। ১৪৫, ১৪৭ গতির বলগুলো সাপের ছোবলের মতো যাচ্ছিল ইমরুল ও সাদমানের দিকে। প্রথম ওভারে তো সাদমান ব্যাটে বল লাগানোর সাহসই করলেন না। চতুর্থ ওভারে ইমরুলের ব্যাটে রান দিয়ে রানের খাতা খুলে বাংলাদেশ। পরের ওভারে সামদানের খোঁচায় বাংলাদেশ পায় প্রথম বাউন্ডারি। ইমরুল প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে। কিন্তু পরের বলেই আউট। উমেশের লাফিয়ে উঠা বলে ব্যাট তাক করে গালিতে ক্যাচ দেন ৬ রানে। এ ইনিংস মিলিয়ে ২৩ ইনিংসে ইমরুলের নেই কোনো হাফ সেঞ্চুরি!

অপরপ্রান্তের পেসার ইশান্ত শর্মা কেন উইকেটের অভাবে থাকবেন। এগিয়ে এলেন সাদমান। ডানহাতি পেসারের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ওই ইমরুলের মতো ৬ রানেই শেষ সাদমানের ব্যাটিং। তিনে ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন মুমিনুল, চারে মিথুন। দুজন জুটি গড়ে খানিকটা এগিয়ে নিয়েছিলেন দলকে।  রান তুলতে পারেননি। কিন্তু অনেকটা সময় উইকেটও পড়তে দেননি।

কিন্তু সামির কাছে জুটি ভাঙার মন্ত্র জানা ছিল। ৩৬ বলে ১৩ রান করা মিথুন সামির গতিতে বিট হয়ে এলবিডব্লিউ হন। চতুর্থ উইকেট দল পায় সবথেকে সফলতম জুটি। মুমিনুল ও মুশফিক আরো একবার জুটি গড়ে দলকে ভালোর সংগ্রহের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তারা কোনো উইকেট নিতে দেননি ভারতকে।

উইকেটে থিতু হয়ে খোলস থেকে বের হয়ে আসেন তারা। মুমিনুল সহজাত ড্রাইভে চার হাঁকান, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বল পাঠান বাউন্ডারিতে। মুশফিক ডাউন দ্য উইকেটে এসে অশ্বিনকে ছক্কা মারার পর পরের বলেই পয়েন্ট নিয়ে চার মারেন। মনে হচ্ছিল তাদের জুটিতেই বাংলাদেশের রানের চাকা এগোবে। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে যায় বিরতির পর।

বিরতির পর দ্বিতীয় ওভার। অশ্বিনের প্রথম বল। ডানহাতি স্পিনারের স্লাইডার ছেড়ে দিয়ে সোজা বোল্ড বাংলাদেশের অধিনায়ক। ৮০ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার। মুমিনুলের আউটে ভাঙে ৬৮ রানের জুটি।

সেখান থেকে ৫১ রান যোগ করতেই শেষ ৬ ব্যাটসম্যান সাজঘরে।  শুরুটা মাহমুদউল্লাহকে। ইশান্ত শর্মাকে পুল করে দারুণ চারে শুরুটা ভালো করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু অশ্বিনের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করে উইকেট হারান ১০ রানে। অথচ ৭ রানে অশ্বিনের বলে স্লিপে একবার জীবনও পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

মুশফিক দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করলেও তাকে সাজঘরে ফিরতে হয় গতিতে পরাস্ত হয়ে। সামির ইনসুইং ডেলিভারিতে ধীরে ব্যাট নামানোর মাশুল দিয়েছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ছোট্ট এ ইনিংস সাজানোর পথে মুশফিক কোহলি ও রাহানের হাতে জীবন পেয়েছেন দু’বার। উমেশের বলে প্রথমে তার ক্যাচ ছাড়েন কোহলি। তখন রান ছিল ৩। রাহানে অশ্বিনের বলে মুশফিকের ক্যাচ ছাড়েন ১৪ রানে। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। লিটন (২১), মিরাজ (০), তাইজুলরা (৭) ভালো করতে পারেননি।

১০ উইকেটের ৭টি পেয়েছেন পেসাররা। সামি ২৭ রানে পেয়েছেন ৩টি। ইশান্ত ও উমেশ ভাগাভাগি করেছেন ২টি করে। পেসারদের দাপটের দিনে অশ্বিনের পকেটে গেছে ২ উইকেট।

ভারতীয় পেসারদের আগুণঝরা বোলিংয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন আবু জায়েদ রাহী। তাইতো শুরুতেই ফেরান রোহিত শর্মাকে। হাফ ভলিতে আলগা শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রোহিত। দ্বিতীয় উইকেটে চেতেশ্বর পূজারা ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৭২ রানের জুটি গড়ে দিন শেষ করেছেন। রাহী দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে শেষ বিকেলে আগাওয়ালকেও ফেরাতে পারতেন। কিন্ত ইমরুল ক্যাচ ছেড়ে সব নষ্ট করেন। আগারওয়াল ৩৭ ও পূজারা ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।

দেখার বিষয় ভারত তাদের রান কোথায় নিয়ে যায়।


ইন্দোর/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়