গোধূলি লগ্নে ডুবল আশার সূর্য!
কলকাতা থেকে ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: মিলটন আহমেদ
গোধূলি লগ্ন কারো মনে প্রেম জাগায়। কাউকে দেয় যন্ত্রণা। প্রেমের সময়টা মনে হয় স্বর্গ। যন্ত্রণার সময়টা নরক! যে যন্ত্রণা কখনো হয় লজ্জার, কখনো পুড়িয়ে ছারখার করে চারপাশ। কখনো ডুবিয়ে দেয় আশার সূর্য। বিরাট কোহলির কথাই চিন্তা করুন। গোলাপি বলে দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পাবেন সেই প্রত্যাশা নিয়েই ব্যাটিং করছিলেন ইডেনে। কিন্তু গোধূলি লগ্নে তাকে হতাশ করেন উড়ন্ত তাইজুল। সীমানায় দাঁড়িয়ে যে ক্যাচ ধরেন তাতে স্টেডিয়ামের ৩০ হাজার দর্শকের করতালি পান তাইজুল।
কোহলির আগে পরে মাত্র ৫৮ রান তুলতেই ভারতের ৫ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। সময়টা ওই গোধূলি লগ্ন। এরপর বাংলাদেশের পালা। ১৩ রান তুলতেই নেই ৪ ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যর্থ টপ অর্ডার। সময়টা ওই গোধূলি লগ্ন। দিবারাত্রির টেস্ট। ব্যবহৃত হচ্ছে গোলাপি বল। গোধূলিলগ্নে ব্যাটসম্যানদের চোখে ধূলা দেয় গোলাপি বল! তাতেই যেন তালগোল পাকিয়ে সব হারায় ব্যাটসম্যানরা।
ইডেনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ১০৬ রানের জবাবে ভারত ৯ উইকেটে তোলে ৩৪৭ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার নড়বড়ে ব্যাটিং। ৬ উইকেটে দলীয় রান ১৫২। এখনও পিছিয়ে ৮৯ রানে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ আরেকটি টেস্ট পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে! অসম্ভাবিক কিছু না হলে ইনিংস ব্যবধানে হারতে পারে টিম বাংলাদেশ।
বিরাট কোহলির ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল ভারতের সবাই। গোলাপি বলে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে ইতিহাস গড়ার হাতছানি তার। হতাশ করেননি ভারতের অধিনায়ক। চা-বিরতিতে যাওয়ার আগেই কোহলি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৭তম টেস্ট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৭০তম সেঞ্চুরি। সাথে নিজের নাম লিখিয়ে নেন ইতিহাসের পাতায়। ১৯৩৪ সালে লালা অমরনাথ ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন। কোহলি দিবা-রাত্রিতে প্রথম। ১৯৮৩ সালে কপিল দেব ভারতের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন দিনের আলোয়। দিবারাত্রির ম্যাচে ১৯৯১ সালে সঞ্জয় মাঞ্জারেকার প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ৫৯ রানে দিন শুরু করা কোহলির তিন অঙ্ক ছুঁতে বেগ পেতে হয়নি। নিজের সহজাত ব্যাটিংয়ে রান তোলেন দ্রুত। বাংলাদেশের বোলাররাও কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি মাস্টারক্লাসের বিপক্ষে। সেঞ্চুরির পর তার আগ্রাসন বেড়ে যায় ২২ গজে। রাহীকে দ্বিতীয় ঘন্টায় ক্রিজে স্বাগত জানান তিন বাউন্ডারিতে। ওই ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। কোহলিকে বোলাররা থামাতে পারছিলেন না কিছুতেই। এগিয়ে আসলেন ফিল্ডার তাইজুল। লং লেগে দাঁড়িয়ে মাথার উপর দিয়ে আসা বল লাফিয়ে তালুবন্দি করেন তাইজুল! অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়। কোহলিও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে! উড়ন্ত তাইজুলের দুর্দান্ত ক্যাচে কোহলির ১৯৪ বলে ১৩৬ রানের সাজানো ইনিংসটি কাটা পরে।
কোহলির আগে দিনের প্রথম ঘন্টায় বাংলাদেশ পায় রাহানের উইকেট। কনকাশন সাবে মাঠে নামা তাইজুলের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ৫১ রানে। এরপর জাদেজার সঙ্গে কোহলির ৫৩ রানের জুটি। বিরতির পর জাদেজাকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান রাহী। বিরতির পর ১১৮ মিনিটে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলে ৫৮ রান। ২৪১ রানে এগিয়ে থেকে কোহলি ইনিংস ঘোষণা করেন ডিনারের আগেই।
পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যে করেই হোক গোধূলিলগ্নের সময়টায় ব্যাটিংয়ে পাঠাবেন। তাতে ফলও পায় ভারত। বিরতির আগে ৭ রানে সাদমান ও মুমিনুল সাজঘরে। বিরতির পর পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট। সাজঘরে মিথুন ও ইমরুল। টপ অর্ডারের আবার ব্যর্থতায় আরেকটি লজ্জার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা পাল্টে মাহমুদউল্লাহ আগ্রাসন দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। যে বলগুলো শেষ তিন ইনিংসে ছেড়ে খেলেন সেগুলোতে রান তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তাতে সফল হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পাল্টা আক্রমণে গিয়ে ৪১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৩৯ রান তুলে নেন। মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে গড়েন ৬৯ রানের জুটি।
দুজনের ব্যাটে যেমন রান বাড়ছিল তেমনি ভারতের আক্রমণও একটু নির্বিষ হচ্ছিল। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর পায়ের টানে শেষ তাদের লড়াই। রান নিতে গিয়ে ডানপায়ে টান পড়ে। মাঠ ছেড়ে উঠে যান তখনই। এরপর মুশফিক ও মিরাজের ৫১ রানের জুটি। সেই জুটি গড়ার পথে মুশফিক তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ সেঞ্চুরি। মিরাজ বরাবরের মতো ভালো শুরু করে ফেরেন বাজে শটে। দিনের শেষ উইকেট তাইজুলের। তাকে আউট দিয়ে শেষ হয় দিনের খেলা। আম্পায়াররা ম্যাচ টেনে নেন তৃতীয় দিনে।
তাইজুল ফেরার পর আরও ২৩ মিনিট খেলা বাকি ছিল। ম্যাচ ওই সময়ে শেষ হতে পারত কিনা তা বলা মুশকিল। তবে গোধূলিলগ্নে অস্ত যেতে বসা সূর্যের সঙ্গে ডুবে যায় বাংলাদেশের আশার সূর্য। জানিয়ে রাখা ভালো, মাহমুদউল্লাহর চোট গুরুতর নয়। তৃতীয় দিন ব্যাটিং করতে পারবেন। মুশফিকের ৫৯ এর সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ অবদানে ভারতকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে নামাতে পারে কিনা বাংলাদেশ সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন। কোহলিদের ব্যাটিংয়ে নামাতে করতে হবে আরও ৯০ রান। নয়তো ৪২তম ইনিংস হার অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য!
কলকাতা/ইয়াসিন/আমিনুল/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন